মশা নিধনের ওষুধের নমুনা বিশেষ বিমানে আজই দেশে আসবে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে এমন তথ্য জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতকে তারা বলেন, ওই নমুনা ওষুধের কার্যকারিতার ওপর মহাখালীর একটি ল্যাবরেটরিতে প্রাথমিক পরীক্ষা চালানো হবে।
তবে হাইকোর্ট বলেছে, যখন মশার প্রকোপ শুরু হয়েছে, তখন কেনো ব্যবস্থা নেননি? মশা নিধনে দুই সিটি করর্পোরেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
শুনানিতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। আর উত্তর সিটির পক্ষে আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ।
এর আগে এডিস মশা মারতে বিদেশ থেকে নতুন ওষুধ আনতে কত সময় লাগবে তা বৃহস্পতিবারের মধ্যে জানাতে বলেছিল হাইকোর্ট।
মশা নির্মূলে দুই সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।
আদালতের রুল জারির পর ঘুম ভেঙেছে। আদালত বলেন, কেউ যদি জেগে ঘুমায় তাহলে তাকে জাগানো যায় না। দুই সিটি কর্পোরেশনের অবস্থা হচ্ছে সেই রকম।
মশা নিধনের বিষয়টি আপনারা সিরিয়াসলি (গুরুত্ব) নিচ্ছেন না। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন।
২৫ জুলাই সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীরা হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন, ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়ে এডিস মশা নির্মূল করতে চায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
কারণ এখন যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে মশা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কিন্তু মশা মরছে না। ফলে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়ে মশা নির্মূল করা হবে।
তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিন সময় দেন আদালত। সে অনুসারে মঙ্গলবার প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুই সিটির আইনজীবীরা।
শুনানিতে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, মশা নিধনে প্রতিটি ওয়ার্ডে লোকবল বাড়ানো হয়েছে।
আদালত বলেন, আমাদের ধারণা যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এজন্য বিভিন্ন মহল থেকে অধিক কার্যকর ওষুধ ছিটানোর কথা বলা হচ্ছে। আপনার রাইফেল আছে, গুলি নেই। তখন রাইফেল থেকে কী লাভ?
আইনজীবী বলেন, চীন থেকে ওষুধ আনা হবে। সিটি কর্পোরেশন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মশা নিধনে।
আদালত বলেন, আপনাদের এ কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে। আইনজীবী বলেন, সারা বছরই মশা নিধন কার্যক্রম চলে। এখন মশার প্রকোপ বেড়েছে।
আদালত বলেন, যদি সারা বছর কার্যক্রম চলে তাহলে প্রকোপ বাড়বে কেন? আইনজীবী বলেন, নতুন একটি ওষুধ আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ হয়তো লাইসেন্সটা পেয়ে যাবে।
১-২ সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ওষুধ চলে আসবে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। আদালত বলেন, ভারতেও ওষুধ রয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত ওষুধ আনা যেতে পারে।
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাইনুল হাসানকে আদালত বলেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করেছে। এ ব্যাপারে সরকার কি করছে?
আমরা কি প্রতিটি দফতরের লোকদের ডেকে তাদের বক্তব্য শুনব? মাইনুল হাসান বলেন, ডেঙ্গু বর্তমানে যে আকার ধারণ করেছে তাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
এ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা না হলে আরও বড় আকার ধারণ করত। তবে পুরনো ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। আদালত বলেন, অর্থমন্ত্রী বলছে ঢাকার মশা মারবে সিটি কর্পোরেশন।
তাহলে দেশের মশা কে মারবে? আমরা নতুন ওষুধ কেনা নিয়ে কোনো দফতর বা বিভাগের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি দেখতে চাই না।
শুনানিতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, বর্তমান অবস্থায় সরকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে নতুন ওষুধ এনে দিলে ভালো হয়।
তাহলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না। আদালত বলেন, ওষুধের ডোজ বাড়ানোয় মশা মরেছে? আইনজীবী বলেন, মনে হয় কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
ফলাফল পেতে আরও সময় লাগবে। আদালত বলেন, হাসপাতালে যে হারে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে তাতে বোঝা যায় ওষুধ কতটা কার্যকর হচ্ছে?
ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন নজরে আসার পর ১৪ জুলাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।