[ad_1]
দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদীয় রাজধানী কেপটাউনের বাসিন্দাদের বিপদ ঘনিয়ে আসছে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই আধুনিক এ শহরটি পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। কেপ টাউনে ভয়াবহ পানি সংকটের চিত্র তুলে ধরে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম সাগরতীরে অবস্থিত কেপ টাউন শহরটির পানির মজুত ক্রমশঃ কমে আসছে। এ বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যেই শহরটি সম্পূর্ণ পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। কেপ টাউনের পানির মজুদ কমে যাওয়া অব্যাহত থাকলে সরকার তিন মাসের মধ্যেই ‘ডে জিরো’ ঘোষণা করবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। শহরের ২০০টি পানি সংরক্ষণাগার থেকে সারি ধরে পানি সংগ্রহ করতে হবে বাসিন্দাদেরকে। এতে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শহরটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য জরুরি প্রতিষ্ঠানে অবশ্য পানি সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
কেপ টাউন শহরটি পরিবেশ সংরক্ষণের দিক দিয়ে বেশ বিখ্যাত। কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে লম্বা খরার কারণে শতাব্দীর সবচাইতে পানিশূন্য অবস্থায় এসে ঠেকেছে এ শহরটি।
কেপ টাউনের পানি আসে মূলত কয়েকটি বাঁধ থেকে। ২০১৪ সালে এর বাঁধগুলো পানিতে টইটুম্বুর ছিল। কিন্তু এর পরের বছরগুলোতে খরার কারণে এই পানি শুকিয়ে ১৩ শতাংশে কমে এসেছে। নাসার একটি অ্যানিমেশন থেকে তা দেখা যায়।
কেপ টাউনের পানির সবচাইতে বড় উৎস দিওয়াটারস্ক্লুফ বাঁধ বর্তমানে মাত্র ১৩ শতাংশ পানি ধারণ করছে। সূত্র: নাসা
সিএনএনর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানি সংকট কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে বাসিন্দাদের পানি ব্যবহারের নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিয়েছে স্থানীয় সরকার। দৈনিক মাথাপিছু ৫০ লিটারের বেশি পানি ব্যবহার করলে বাসিন্দাদের গুনতে হবে জরিমানা।
কেপ টাউনের এহেন দুর্দিনে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক শহর, ইস্ট লন্ডন। এই শহরের এক বাসিন্দা, টালিটা ভ্যান ডার হিভার তার ১৮ মাস বয়সী শিশুকে বেবি ফরমুলা পান করানোর সময়ে কেপ টাউনের ব্যাপারে এই সংবাদটি দেখেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘বেবি ফরমুলা তৈরির জন্য তো পানি দরকার হয়, কেপ টাউনের মায়েরা কী করে শিশুদেরকে খাবার দেবে?’
এই চিন্তা থেকে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া হোয়াটসঅ্যাপে শুরু করেন একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ। তিনি ইস্ট লন্ডনের বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন তারা যেন প্রত্যেকে দুইটি পাঁচ লিটার বোতলে ভরে কেপ টাউনের জন্য পানি দান করে।
এই পানি কেপ টাউনে বয়ে নিয়ে যাবার জন্য তিনি কৃষকদেরকে ব্যবহার করেন। ইস্ট লন্ডন, জোহানেসবার্গ এবং ডারবানে যেসব কৃষক সবজি ও অন্যান্য টাটকা পণ্য নিয়ে আসেন, তারা খালি ট্রাক নিয়েই আবার কেপ টাউনে ফেরত যান। এই খালি ট্রাকে পানি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন হিভার।
হোয়াটসঅ্যাপে এই পরিকল্পনার কথা জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রচুর মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়, যারা পানি দান করতে এবং কেপ টাউনে এই পানি বয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। এসব শহরের স্কুলগুলো থেকেও পানি দান করা হচ্ছে।
হিভারের দেখাদেখি জোহানেসবার্গের এক কুরিয়ার কোম্পানির মালিক ময়নেন বাউচারও তার কোম্পানির মাধ্যমে বিনামূল্যে এই পানি পরিবহন শুরু করেন। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু করে ইতোমধ্যে ১০ হাজার লিটার পানি দান করা হয়েছে কেপ টাউনবাসীকে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস
[ad_2]