দিনাজপুরে দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ, দুদকের তদন্ত
দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুর শহরে (২০২২-২০২৩) অর্থ বছরে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ডাস্টবিন, কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যর বিশিষ্ট ইনফোর্সমেন্ট টিম দিনাজপুর পৌর শহরের সদ্য নির্মাণ সমাপ্ত আটটি সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পযন্ত তদন্ত করতে মাঠে নামে।
দুদকের ইনফোর্সমেন্ট টিমের প্রধান ইসমাইল হোসেন বলেন, সকাল থেকে দিনাজপুর শহরের অভিযোগ পাওয়া আটটি সড়ক নির্মাণ কাজের মান ও রাস্তায় ব্যবহৃত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। দুদকের ইনফোর্সমেন্ট টিম অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন খুব শীঘ্রই দুর্নীতি দমন কমিশন এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।
তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের দোসর ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী শেখ মোঃ শাহ আলম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দিনাজপুর শহরের আটটি কাজের মধ্যে ছয়টি কাজ তিনি নিজেই বাগিয়ে নিয়েছিলেন। কাজ বাগিয়ে নেওয়ার পর সরকারি ওয়ার্ক অর্ডারের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ও নিম্নমানের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দিনাজপুর শহরের রাস্তা নির্মাণের কাজটি সম্পন্ন করেন। স্বল্প দিনের মধ্যেই রাস্তা নষ্ট হতে শুরু করেছে।
এই রাস্তা নির্মাণের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক তদন্ত করতে মাঠে নামেন। প্রথম দিন তদন্তে মাঠে নেমেই প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন বলেও দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম নিশ্চিত করেছেন।
ঠিকাদার শেখ মোহাম্মদ শাহ আলম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে কাজটি সম্পূর্ণ করে। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই আটটি সড়কই নষ্ট হতে চলেছে।
এই নির্মাণাধীন কাজের প্রকৌশলীদেরকে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করার মাধ্যমে কাজটি ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দিনাজপুরের এলজিইডি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সকলেই এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে।
অভিযান পরিচালনা কালে বিকাল ৪ টায় দিনাজপুর দুদক ইনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্য সহকারি পরিচালক নুর আলম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিনাজপুর পৌরসভার ৮টি কাজের এর মধ্যে মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী শেখ মোঃ শাহ আলম ৬ টি কাজ নিয়েছিলেন ও দুটি কাজ মেসার্স মুরাদ আহমেদ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছিলেন। মেসার্স মুরাদ আহমেদ ঠিকাদারের স্বত্বাধিকারী মুরাদ আহমেদ এই নিম্নমান কাজের সাথে জড়িত বলেও প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দিনাজপুর শহরের এই সড়ক নির্মাণের আটটি কাজে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে এলজিইডির বরাদ্দ ছিল ছিল ১০ কোটি ও পৌরসভার ছিল ৪ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থের অধিকাংশ অর্থই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়েছে ইনফোর্সমেন্ট টীম।
What's Your Reaction?