ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদনের জেরে পদ হারালেন মহাপরিদর্শক

Feb 12, 2025 - 18:20
 0  6
ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদনের জেরে পদ হারালেন মহাপরিদর্শক
ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিনই দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের (ইউএসএআইডি) মহাপরিদর্শক পল মার্টিনকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউএসএআইডির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মহাপরিদর্শকের অফিস ইউএসএআইডিকে বিলুপ্ত করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর পল মার্টিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সোমবার ইউএসএআইডির মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ ইউএসএআইডির সক্ষমতাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক পররাষ্ট্র দপ্তরের বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত এবং ইউএসএআইডির কর্মী সংখ্যা কমানোর কারণে সংস্থাটির অনুমোদিত ৮.২ বিলিয়ন ডলার বিতরণ না করায় মানবিক সহায়তা নিরাপদে বিতরণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন মঙ্গলবার পল মার্টিনকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর ট্রেন্ট মোর্সের পাঠানো একটি ইমেলের মাধ্যমে মার্টিনকে বরখাস্তের কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউএসএআইডি মহাপরিদর্শক পদ থেকে আপনাকে অপসারিত করা হলো যা ‌‘অবিলম্বে কার্যকর’ হবে। তবে বরখাস্তের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসও কোনো মন্তব্য করেনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি প্রেডিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউএসএআইডির ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেন। তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। সেই আদেশেই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। এতে বলা হয়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। তিনি নির্বাহী আদেশে বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণার পর চলতি মাসের শুরুতে ইউএসএআইডির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে যায়। 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক ওই সময় ইউএসএআইডির কড়া সমালোচনা করেন। ইউএসএআইডিকে একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে তিনি মন্তব্য করেন। ইলন মাস্ক বলেন, মার্কিন জনগণের করের অর্থ দিয়ে জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি। সেইসঙ্গে সংস্থাটি প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য অর্থ ব্যয় করেছে। তাই সময় হয়েছে সংস্থাটির মরে যাওয়ার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনটি পোস্ট শেয়ার করেছেন মাস্ক। সেখানে তিনি বলেছেন, আপনারা জানেন কী, ইউএসএআইডি আপনাদের করের অর্থে জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ এর মতো জীবাণুও অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে কয়েক কোটি মানুষ মারা গেছেন। 

তবে পরের সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে ছাঁটাইয়ের মুখে থাকা প্রায় ২ হাজার ৭০০ ইউএসএআইডি কর্মীকে সাময়িকভাবে কাজে ফেরার অনুমতি দিয়েছে দেশটির আদালত। ৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এক আদেশে ওয়াশিংটনের ডিস্ট্রিক্ট জজ কার্ল নিকোলস সাময়িকভাবে হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন। এই আদেশ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছিলেন এই বিচারক। কার্ল নিকোলসের আদালতের এই হস্তক্ষেপে বিদেশি সহায়তা সংস্থাটিকে ভেঙে দিতে ধাক্কা খান ট্রাম্প। 

আদালতের আদেশের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ছাঁটাই হওয়া প্রায় ৫০০ কর্মী কাজে পুনর্বহাল হয়েছেন। এ ছাড়াও সবেতন ছুটিতে পাঠানো ইউএসএআইডির ২,২০০ কর্মী কাজে ফিরতে পারবেন। এদের মধ্যে যারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আছেন তাদেরকেও স্থানান্তর করতে পারবে না ট্রাম্প প্রশাসন।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’ তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow