বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকদের পদোন্নতির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকরা অবিলম্বে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবিতে রাজধানীর শিক্ষা ভবনে দ্বিতীয় দফায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় চার শতাধিক প্রভাষক কালো ব্যাজ ধারণ করে শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে বন্ধ থাকা পদোন্নতি প্রক্রিয়া চালুর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোরালো দাবি জানান।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ৩৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শামীম আহমেদ, নওশীন আঞ্জুম, রহুল আমিন, শহীদুল ইসলাম আলবার্ট এবং ৩২তম বিসিএস ব্যাচের হোসনে আরা ফেরদৌসসহ অন্যান্য পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তাঁরা পদোন্নতির প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার পাশাপাশি স্বচ্ছ ও ন্যায্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় আমরা শুধু আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না, শিক্ষা খাতের সামগ্রিক মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের ন্যায্য পদোন্নতি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
অবস্থান কর্মসূচির পর প্রভাষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মজিবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. খান মাঈন উদ্দিন খান সোহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা তাদের দাবি তুলে ধরেন এবং পদোন্নতির জন্য অবিলম্বে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) বৈঠক আহ্বানের দাবি জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রভাষকদের আশ্বাস দেন যে, অতি শীঘ্রই ডিপিসি বৈঠকের মাধ্যমে পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
জানা যায়, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া গত ১৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। গত ৪ জুন ২০২৫ তারিখে ডিপিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আত্তীকৃত শিক্ষকদের মামলা এবং শূন্য পদ সংক্রান্ত মতভেদের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সর্বোচ্চ ৫০০ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি সম্ভব। তবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশনের দাবি, শূন্য পদের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি এবং আরও বেশি সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া উচিত।
বর্তমানে ৩২তম বিসিএস ব্যাচের প্রায় ৬০ জন এবং ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের প্রায় ৩৫০ জন কর্মকর্তা তাদের প্রথম পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া ৩৫তম বিসিএস পর্যন্ত মোট ১২২৭ জন কর্মকর্তা প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য যোগ্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রয়েছেন।
পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়ায় তাঁরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে, যা শিক্ষা খাতের সামগ্রিক মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একজন প্রভাষক বলেন, “আমরা শিক্ষার মান বজায় রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা শুধু আমাদের জন্যই নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও ক্ষতিকর।”
দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যে এটি ছিল প্রভাষকদের দ্বিতীয় দফা অবস্থান কর্মসূচি। এর আগেও তাঁরা একই দাবিতে শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা সতর্ক করে বলেন, যদি তাদের দাবি দ্রুত পূরণ না হয়, তবে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবে এবং শিক্ষা খাতের উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।”
What's Your Reaction?






