রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলা: তদন্তে মিলেছে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা

রংপুর প্রতিনিধি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্র আবু সাঈদ হত্যায় ৩০ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে আটজন পুলিশ; বাকিরা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা। এদের চারজন কারাগারে আছেন। চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার এ হত্যা মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
প্রসিকিউশন আগামী রোববার এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেবে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর চতুর্থ কোনো মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলো।
এদিকে এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে সাঈদের স্বজন ও সহপাঠীরা। তাদের দাবি, রাজধানীতে বসে তদন্ত কর্মকর্তারা পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে পুলিশ খুব কাছ থেকে গুলি করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। তাঁর বুক পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল, গলা থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত।
মামলার অগ্রগতি বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এসেছে। প্রসিকিউশনে তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারের জন্য আগামী রোববার নবগঠিত ট্রাইব্যুনাল-২ এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। এরপর বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, গুলির কারণে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সাঈদ মারা যান। এ হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন একাধিকার বদল করা হয়। চাপ দিয়ে ছয়বার প্রতিবেদন পাল্টাতে বাধ্য করা হয় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। যারা চাপ দিয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ।
তদন্ত প্রত্যাখ্যান স্বজন ও সহপাঠীর আবু সাইদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন তার স্বজন ও সহপাঠীরা। তাদের অভিযোগ, গণশুনানি কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ছাড়াই এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যা ভিত্তিহীন ও মনগড়া।
সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, আশা ছিল, আগামী ১৬ জুলাই ঘটনার এক বছরের মাথায় আমরা ভালো একটা ফল পাব। তদন্তে দফায় দফায় সময় বাড়ানোর পরও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়াই প্রতিবেদন দাখিল করায় ন্যায়বিচার পাব কিনা শঙ্কায় আছি।
এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গতকাল দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি ছিল বলে আমি মনে করি।
What's Your Reaction?






