ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া ৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন

Feb 21, 2025 - 16:09
 0  4
ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া ৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন
ছবি : সংগৃহীত

ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন পাঁচ বাংলাদেশি। দালালচক্র লিবিয়ায় নিয়ে তাদের ‍তুলে দেয় মানব পাচারকারী চক্রের হাতে। এরপর চক্রটি তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়ায়। সেই সঙ্গে চলে অমানবিক নির্যাতন।

পরে দেশ থেকে টাকা পাঠালে তাদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য বোটে তুলে দেওয়া হয়। সাগরে বোটটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মৃত্যুর মুখে পড়েন তারা। ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া এই পাঁচ বাংলাদেশি অবশেষে দেশে ফিরেছেন। 
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আলজেরিয়া থেকে দেশে ফেরত আসেন তারা।
 
মানবপাচারের শিকার পাঁচজন হলেন- ঢাকার মোস্তাকিম সরকার, শেরপুরের মোজাম্মেল হক, মাদারীপুরের জিহাদ ফকির, রোমান হাওলাদার ও ইয়াসিন হাওলাদার। 

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, লিবিয়ার ত্রিপোলিতে মানবপাচার চক্রটি তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়ায়। পরে দেশ থেকে টাকা পাঠালে তাদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য তুলে বোটে তুলে দেওয়া হয়। সাগরে বোটটি নষ্ট হয়ে গেলে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে।

পরে আলজেরিয়া সীমান্তে নিলে তারা সেখানে অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটেন। এরপর বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং আলজেরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তাদের।

পাচারের শিকার মাদারীপুরের ইয়াসিন হাওলাদার বলেন, ‘লিবিয়ায় মাফিয়ার কাছে আটক ছিলাম। আমার পরিবার ঋণ, জমি বন্ধক ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে আমার মুক্তিপণ জোগাড় করে দালালদের মোট ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন আমার পরিবারের আর কিছুই নেই।’
 
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার আজিজ আহমেদ বলেন, ‘পাঁচ বাংলাদেশি মানবপাচার সার্ভাইভারের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং-ইন-পারসন্স হিরো নেটওয়ার্কের সহায়তা নিয়েছি। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে মানবপাচারের শিকার আরো আট বাংলাদেশিকে ব্র্যাক ও টিআইপি হিরো নেটওয়ার্কের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনেছি।’

গত আট বছর ধরে বিমানবন্দরের বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তায় দিয়ে আসছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সিভিল এভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, এপিবিএনসহ সবার সহযোগিতায় গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
 
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ইউরোপের প্রলোভন দেখিয়ে, যাদের লিবিয়ায় নেওয়া হয়, তারা ভালো চাকরি পায় না। উল্টো তাদের অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ চেয়ে নির্যাতন করা হয়। 

তিনি আরো বলেন, এতকিছুর পরও ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা থামছেই না। মানুষকে সচেতন হতে হবে। দালল ও মানবপাচার চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সবাই সতর্ক থাকলে কেউ আর এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow