চর দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রা

Aug 17, 2025 - 18:22
 0  3
চর দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রা
ছবি : সংগৃহীত

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর হাতিয়ার চরকিং-সুখচর এলাকায় মেঘনার বুকে জেগে ওঠা 'চর জোনাক (জাগলার চর)' একের পর এক গ্রুপ চর দখলে মরিয়া হয়ে উঠছে। গত ১৯ জুলাই সকালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এক পক্ষের অন্তত পাঁচজন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সময়ে সময়ে চলে এই অবৈধ অস্ত্রের মহড়া।

চরের উত্তর পাশসহ বেশিরভাগ জমিতে ধানবীজ গজিয়ে উঠলেও দক্ষিণাংশে এখনো চলছে চারটি ট্রাক্টর দিয়ে অবিরাম জমি কর্ষণ। এ অবস্থায় বনের জায়গা পুনরুদ্ধার এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফরেস্ট বিভাগ ও স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।

গত বুধবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, সুখচর এলাকার কাইন্না খালের সোজা পশ্চিমে চরের উত্তরাংশে রয়েছে 'টেডাইঙ্গারা'। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন নিজাম মেম্বার ও নবীর উদ্দিন। তাদের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে ফিরোজ উদ্দিন নামের একজন সক্রিয়।

অন্যদিকে, দক্ষিণাংশে প্রায় তিন হাজার একর বনভূমি দখলে রেখে রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে নাসির, মেহরাজ ও ছালা উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন এক গ্রুপ। এ অংশে দাগ (৯৬-১০০ শতক) প্রতি পাঁচ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে ভূমিহীনসহ সাধারণ মানুষদের চাষের জন্য জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে বলে কৃষকরা জানান। তবে এ বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসের কাছে সম্পূর্ণ অজানা বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন কৃষক অভিযোগ করেন, চরের দক্ষিণ পাশে জমি বুঝিয়ে দিতে ভূমিহীন ও সাধারণ মানুষদের থেকে সরাসরি টাকা নিচ্ছেন চরকিং ইউনিয়নের শুল্লকিয়া ও ইসলাম মার্কেট এলাকার নাসির (সুখচরের বাসিন্দা), ছালা উদ্দিন, রাসেল ও বাবুল হক। এদের পেছনে রয়েছে এখানকার সাবেক এক মেম্বার, যিনি সবসময় রাজনৈতিক নেতাদের আনুকূল্যে অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণের এই গ্যাংয়ের সংযোগস্থল কিল্লা বাজার। দুই সাইডের মধ্যবর্তী কাইন্না খালের সোজা পশ্চিমে ভাটার সময় মেঘনার এ অংশ শুকিয়ে গেলে দুই ইউনিয়নের লাগোয়া চরে দখলবাজরা সহজে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে। এ সুযোগে তারা চরের হরিণ, গরু, মহিষ ও ভেড়া জবাই করে বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। চলতি মাসের ৪ তারিখে হরিণের মাংস পাচারের একটি ঘটনা ঘটে। উত্তর পাশের চক্রটি জাহিদ নামের এক মোটরসাইকেল চালক দিয়ে হরিণের মাংস পাচারের সময় উপজেলার নলচিরা ঘাট এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

এসব অপরাধের বিষয়ে নলচিরা বন বিভাগ জানিয়েছে, বনের জায়গা দখল ও বন্যপ্রাণী অপরাধে দুটি মামলা (ঢাল-২/২৫ বন মামলা ও ঢাল-৩/২৫ বন্যপ্রাণী মামলা) দায়ের করা হয়েছে।

নলচিরা বন বিভাগের সূত্র জানায়, চর দখল ও মহিষ চরানো নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর হামলার আশঙ্কায় চলতি বছরের ১০ জুলাই হাতিয়া থানায় একটি জিডি করা হয়। একই তারিখে পত্রের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বিষয়টি জানানো হয়। অথচ এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

১৯ জুলাই জাগলার চর দখল নিয়ে চরকিং ইউনিয়নের শুল্লকিয়া ও ইসলাম মার্কেট এলাকার নাসির-ছালা উদ্দিন গ্রুপ সুখচর এলাকার নিজাম মেম্বার-নবীর উদ্দিন গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। এতে নিজাম মেম্বারের গ্রুপের জিহাদ, আমজাদ, করিম, রিয়াজ ও মিনহাজ গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই হাতিয়া থানায় মামলা হয়।

আহত জিহাদ জানান, তারা জমি চাষের জন্য চরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণের দখলদাররা অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অমানুষিক হামলা চালায়। কোমরের হার্ড ভেঙে যাওয়ায় তিনি বর্তমানে বেল্ট লাগিয়ে কোনোভাবে চলাফেরা করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী রিয়াজ জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে চরের কিছু অংশ ভোগদখলে আছেন। কিন্তু দক্ষিণের দখলদাররা পুরো চর দখলে রাখার জন্য তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

চর সংশ্লিষ্ট নলচিরা বন কর্মকর্তা আল-আমিন গাজী জানান, বনের জায়গায় ট্রাক্টর চালানোর সময় একটি ট্রাক্টর বিকল করে দেওয়া হয়েছে। বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় এবং চরের জায়গা পুনরুদ্ধারে নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, জাগলার চর দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে থানা অফিসার ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow