রংপুরে গণপিটুনিতে দু’জন নিহতের ঘটনায় ৮ পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দলিত সম্প্রদায়ের ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ২ এসআইসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও ক্লোজ করা হয়েছে। সেইসাথে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ৯ টায় তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় জেলা পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন, তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, পুলিশ লাইন্সের এসআই শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল আরিকুদ আখতার জামান, বিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।
এ বিষয়ে রংপুর পুলিশ সুপার আবু সাইম গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সময় তারাগঞ্জ থানা এবং পুলিশ লাইন্সের দুটি টিম সেখানে প্রথমে যায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা অধিক পরিমাণ হওয়ায় তারা সেখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে নি। এ বিষয়ে তাদের দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিলো কীনা সেটি খতিয়ে দেখতে ২ জন এসআই ও ৬ জন কনেস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সি সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার আসিফা আফরোজ আদুরীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে অজ্ঞানপার্টি সন্দেহে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলী এলাকায় ভ্যানসহ দু’জনকে আটকের পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া চোলাই মদ ও বিভিন্ন ওষুধ পান স্থানীয়রা। পরে চোলাই মদের ক্যান খুললে গন্ধে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হন তারা। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ হাসপাতালে নেয়। সেখানে আহত কাকা শ্বশুর রুপলাল রবিদাসকে (৪০) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন রবিবার (১০ আগস্ট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ভাতিজি জামাই প্রদীপ লাল (৪৫)।
এর প্রতিবাদে রবিবার সন্ধায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এ সময় তারা জড়িতদের গ্রেপ্তার ও যথাযথ শাস্তি দাবি করেন।
এ ঘটনায় রুপলালের স্ত্রী মালতি রানী ওরফে ভারতী রানী অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েক গ্রামেরর বাড়িগুলো থেকে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রুপলাল দাস তারাগঞ্জ বাজারে ও প্রদীপ কুমার মিঠাপুকুরের গোপালপুর বাজারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন।
What's Your Reaction?






