ইংরেজি শেখার গুরুত্ব ও বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা : খোন্দকার মোঃ রাজু আহমেদ

Aug 27, 2025 - 17:44
 0  3
ইংরেজি শেখার গুরুত্ব ও বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা : খোন্দকার মোঃ রাজু আহমেদ
প্রতীকী ছবি

বৈশ্বিক যোগাযোগের ভাষা হিসেবে ইংরেজির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ইংরেজি শেখা কেবল একটি বিদেশি ভাষা শেখা নয়, বরং জাতীয় অগ্রগতির চাবিকাঠি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইংরেজি দক্ষতা আজ অপরিহার্য। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার সম্ভাবনা ব্যাপক ও বহুমুখী।

 ইংরেজি শেখার গুরুত্ব

প্রথমত, শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনে ইংরেজির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাপত্র, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও ডিজিটাল লাইব্রেরির বেশিরভাগ সম্পদ ইংরেজিতে উপলব্ধ। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি না জানলে আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ইংরেজি দক্ষতা বাধ্যতামূলক।

দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইংরেজি একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানি, এনজিও, ব্যাংকিং ও আইটি খাতে চাকরির জন্য ইংরেজি জানা অপরিহার্য। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্প (যেমন তৈরি পোশাক, ওষুধ) ও আউটসোর্সিং সেক্টরে ইংরেজি দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। একটি জরিপে দেখা গেছে, ইংরেজিতে দক্ষ ব্যক্তিদের বেতন অন্যদের তুলনায় ৩০-৪০% বেশি।

তৃতীয়ত, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি অপরিহার্য। ইন্টারনেটের ৬০% এরও বেশি তথ্য ইংরেজিতে। ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মতো ক্ষেত্রে ইংরেজি ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। বাংলাদেশ সরকারের "ডিজিটাল বাংলাদেশ" রূপকল্প বাস্তবায়নে ইংরেজি দক্ষতা একটি অন্যতম হাতিয়ার।

চতুর্থত, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বৈশ্বিক সংযোগে ইংরেজি একমাত্র মাধ্যম। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক বা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ বা পর্যটন শিল্প উন্নয়নে ইংরেজি জানা অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এই খাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
 
বাংলাদেশে ইংরেজির সম্ভাবনা

বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। প্রথমত, শিক্ষানীতিতে ইংরেজিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক স্তর থেকেই ইংরেজি বাধ্যতামূলক বিষয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে "ইংলিশ ফর টুমোরো" কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাতে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার লক্ষণীয়। দেশে শতাধিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (যেমন ১০ মিনিট স্কুল, রিমোট জব) ইংরেজি শেখার সুযোগ গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি বিভাগের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা, আইন ও বিজ্ঞান বিভাগেও ইংরেজি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ইংরেজি শিক্ষাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের একটি বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে, যেখানে ইংরেজি দক্ষতা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করে। এছাড়া আইটি খাতে বাংলাদেশের বার্ষিক আয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যার পেছনে ইংরেজি জানা ফ্রিল্যান্সারদের বড় ভূমিকা।

চতুর্থত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ইংরেজির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইংরেজি জানলে বিশ্ব সাহিত্য, চলচ্চিত্র ও গবেষণায় সরাসরি অ্যাক্সেস পাওয়া যায়, যা দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। এটি সামাজিক সচেতনতা ও উদারতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ

সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় দক্ষ শিক্ষকের অভাব, পুরনো শিক্ষাপদ্ধতি ও পরীক্ষামুখী শিক্ষা ব্যবস্থা ইংরেজি শেখার প্রতিবন্ধকতা। তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও যুব সমাজের আগ্রহ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হচ্ছে।

উপসংহার

ইংরেজি শেখা বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এটি শুধু ভাষা শেখা নয়, বরং জ্ঞান, কর্মসংস্থান ও বৈশ্বিক সংযোগের দরজা খুলে দেয়। বাংলাদেশ যদি উন্নত দেশে পরিণত হতে চায়, তবে ইংরেজি শিক্ষায় বিনিয়োগ অপরিহার্য। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষার সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে বাংলাদেশ অচিরেই বিশ্ব দরবারে একটি প্রতিযোগিতামূলক জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

লেখক: খোন্দকার মোঃ রাজু আহমেদ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow