ধ্বংসাবশেষ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট কিছুই নেই

Oct 11, 2025 - 17:38
 0  2
ধ্বংসাবশেষ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট কিছুই নেই
ছবি : সংগৃহীত

অস্ত্রবিরতি স্বস্তি বয়ে আনলেও যুদ্ধে নিঃস্ব ফিলিস্তিনিরা জানান, ধ্বংসাবশেষ ছাড়া অবশিষ্ট নেই কিছুই, তাও ফিরছেন। ঘর নেই, পুরোনো ঠিকানা তো আছে। ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গাজার উত্তরাঞ্চলে পৌঁছে গেছেন দুই লাখ মানুষ। শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে ফিরছেন মাতৃভূমি পুনর্গঠনে।

দুই বছরের একতরফা ইসরাইলি আগ্রাসনে রক্তস্নাত গাজার পথে মানুষের ঢল। উপত্যকা, শুধুই মৃত্যুপুরী আর ধ্বংসস্তূপ। মার্কিন-পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের ভাষায় হামলা স্থগিত শান্তির আরেক নাম। সর্বহারা, নিঃস্ব ফিলিস্তিনিদের কাছেও এটাই সান্ত্বনা। তাই ফিরছেন তারা; ঘর নেই, বাড়ি নেই, সংসার-স্বজন হারিয়ে খোলা আকাশের নিচেই ফিরছেন রাষ্ট্রহীন, গৃহহীন লাখ লাখ মানুষ।

শোক-স্বস্তির মিশেলে অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানাচ্ছেন গাজার ২২ লাখ ফিলিস্তিনি। দক্ষিণ উপকূলে আশ্রয় নেয়া প্রায় দুই লাখ মানুষ এরই মধ্যে ফিরেছেন উত্তরাঞ্চলে, তথ্য অবরুদ্ধ উপত্যকার উদ্ধারকারী বাহিনী বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই— শোককে শক্তিতে পরিণত করেই ফিরছেন মাতৃভূমি পুনর্গঠনে।

গাজার স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আল্লাহ—র অশেষ কৃপা। কী চমৎকার অনুভূতি। আমার মেয়ের মাথার খুলিতে আঘাত লেগেছে, যুদ্ধে আহত সে। এখন তার চিকিৎসা করাতে পারবো। আমাদের দুর্ভোগ শেষ হলো।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা ক্লান্ত। সত্যি, সত্যি, সত্যি ক্লান্ত। সব প্রশংসা আল্লাহ'র যে শেষ পর্যন্ত আমরা গাজায় ফিরছি। আল্লাহ সহায় হোন আমাদের। আশা করি এরপর সব ভালো হবে, কোনো এক কোণায় আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।’

বিমান হামলা আর স্থল অভিযানে ৬৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। অস্ত্রবিরতির খবরে স্বস্তির হাওয়া বইলেও সন্তান-স্বজনহারা মানুষ জানেন, ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের জন্য। ঘরে ফেরার আকুতিই সম্বল তাদের।

গাজার একজন নারী বলেন, ‘দুই বছর আমার কাছে এক লাখ বছরের সমান ছিল। স্বামীকে হারিয়েছি, বাবা-মাকে হারিয়েছি, ভাইবোন-তাদের সন্তান কেউ নেই। অর্ধেক পরিবারই মৃত। জীবনে কল্পনাও করিনি এমন দুর্ভিক্ষ দেখেছি। সমুদ্রসৈকতে খোলা আকাশের নিচে থেকেছি। তাঁবুও জোটেনি। বোমায় আমার ঘরটাও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাও আমি খুশি যে আমি ফিরছি। আর যেন ওই দিনগুলো ফিরে না আসে।’

দুই বছরের যুদ্ধে ইতি টেনে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি এ অস্ত্রবিরতি; যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যা কার্যকর হয় স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটের স্থায়ী সমাধান কতদূর, সে প্রশ্ন আর অনিশ্চয়তার কালো ছায়া ঘিরে থাকার মধ্যেই বাড়ির ঠিকানা খুঁজে ফিরছে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow