সান্ত্বনার জয়ের খোঁজে মুখোমুখি পাকিস্তান-বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দলের লক্ষ্যই ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। পাকিস্তান আবার স্বাগতিক এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়নও। কিন্তু দুই দলই নিজ নিজ প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু এই দুই দলকেই আজ আর হারানো সম্ভব নয়। এক দল আজ জিতবেই। হয় বাংলাদেশ, না পাকিস্তান। বিশ্বের এমন কোনো শক্তি নেই, যে আজ দুই দলকেই হারাতে পারে। এটা সম্ভব না হওয়ার কারণ দুই দলই পরস্পরের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে। যে কারণে এক দল জয় দিয়ে আসর শেষ করবে। অন্য দল ফিরবে রিক্ত হস্তে। খেলা শুরু হবে রাওয়ালপিন্ডিতে বিকেল ৩টায়।
বিশ্বে কথা বলার যদি কোনো প্রতিযোগিতা থাকত, তাহলে সেখানে বাংলাদেশ দল হতো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের হারানোর মতো কোনো দল আশপাশে থাকত না। বলা যায় বিনা বাধায় চ্যাম্পিয়ন হতো। কিন্তু বাংলাদেশ দলের দুর্ভাগ্য এ রকম কোনো আসর বিশ্বে নেই। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বা প্রতিনিধিরা কেমন কথা বলেন? এই যেমন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। যেখানে নিজেদের মান যাচাই না করেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ উঁচু গলায়ই জানিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যের কথা। বাংলাদেশ আসলেই সে রকম দল কি না, কিংবা আদৌ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করার মতো অবস্থানে আছে কি না, তা বিবেচনা করার প্রয়োজনবোধ করেননি অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত অধিনায়কের বলা কথার কী পরিণতি হলো? গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের প্রথম দুইটিতেই বাজেভাবে হেরে বিদায়। কিন্তু বাংলাদেশ দলের আশার যেন শেষ নেই! চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, তো কী হয়েছে, খালি হাতে ফিরব কেন? তাই নতুন করে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সেদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলাকে সামনে রেখে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘আমরা ১০০ ভাগ চেষ্টা করব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।’
বাংলাদেশের যে অবস্থা, তা পাকিস্তানেরও। তারাও গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছে। এ নিয়ে বেজায় চটেছেন তাদের সাবেক ক্রিকেটাররা। সংবাদমাধ্যমে হচ্ছে বিস্তর সমালোচনা। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমতো আছেই। এদিকে আবার শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের যে চাওয়া, তা পাকিস্তানেরও। তারাও জিততে চায়। পেতে চায় সান্ত্বনার জয়। পাকিস্তান দলের প্রধান নির্বাচক ও এই আসরে দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা সাবেক পেসার আকিব জাবেদ জানান, অন্য ম্যাচগুলোর মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এবারের আসরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দলই যেন নানাভাবে একই কাতারে দাঁড়িয়ে। একই রকম মিল খোঁজে পাওয়া যায়। যেমন, দুই দলই হেরেছে বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে। অন্য দলগুলো যেখানে আগে ব্যাট করে প্রায় ম্যাচেই তিনশর বেশি রান করেছে। আবার তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহও অতিক্রম করার দৃষ্টান্তও আছে, সেখানে ব্যতিক্রম এই দুই দল। আগে ব্যাট করে একটি ম্যাচেও তারা তিনশ রান করাতো দূরের কথা, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২২৪ রান করে অলআউট হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অল্পের জন্য অলআউট হতে পারেনি। ৯ উইকেটে করেছিল ২৩৬ রান। পাকিস্তান দুইটি ম্যাচেই অলআউট হয়ে রান করেছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬০ ও ভারতের বিপক্ষে ২৪১।
এবারের আসরে সেঞ্চুরি হচ্ছে প্রতি ম্যাচেই। সেখানে পাকিস্তানের কোনো ব্যাটার সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে অবশ্য বাংলাদেশের তাওহিদ হৃদয় একটি সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন। বোলিংয়ে আবার প্রতিপক্ষকে কোনো দলই অলআউট করতে পারেনি। এমনকি অর্ধেকের বেশি উইকেট নিতে পারেনি। উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই দলের বোলাররাই সমান। দুই ম্যাচে উইকেট প্রাপ্তি ৯টি করে। ভারতের চারটি ও নিউজিল্যান্ডের পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। পাকিস্তানের বোলাররা নিউজিল্যান্ডের পাঁচটি ও ভারতের চারটি উইকেট নিয়েছিলেন। দুই দলই আবার পরপর দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছে। প্রতিপক্ষও ছিল একই। তাই দুই পরাজিত দলের লড়াইয়ে ম্রিয়মাণ হয়ে থাকা দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্য আজ কারা জেগে উঠবেন, কারা হাসবেন শেষ সেটাই দেখার বিষয়।
দুই দলেরই এভাবে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে বিষয়টি নিজ নিজ দেশের জন্য ছিল বেদনায়দায়ক। সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি তারা। যার প্রভাব পড়েছে দুই দলের ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে আজকের ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন ছিল একেবারেই কম। অধিকাংশ প্রশ্ন ছিল আগের ম্যাচগুলো নিয়ে। সংবাদ সম্মেলন দেখে বোঝার উপায় ছিল না, আজ দুই দলের খেলা।
দুই দলই জয় দিয়ে শেষ করতে চাইলেও সেখানে আজ তৃতীয় পক্ষ এসে হাজির হতে পারে। এই তৃতীয় পক্ষ হলো ক্রিকেটের আজন্ম শক্র বৃষ্টি। বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে খুব বেশি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে সে রকম ইঙ্গিত। এ বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে টসও হতে পারেনি। আজকের ম্যাচও একই পরিণত বরণ করতে পারে?
দুই দল এখন পর্যন্ত ৩৯ বার পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। যেখানে জয়ের পাল্লা খুব বেশি ভারী পাকিস্তানের। তারা জিতেছে ৩৪ বার। বাংলাদেশের জয় মাত্র পাঁচটিতে। এর মধ্যে টানা আছে চারটি। রাওয়ালপিন্ডিতে গত বছর বাংলাদেশ দুই টেস্টের সিরিজ জিতে সুখের কাব্য রচনা করেছিল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে তা জলাঞ্জলি দিয়েছে। সেটি আবার ফিরে পেতে পারে সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই আজকের ম্যাচ জিতে।
নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হওয়ায় আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ দলের সেরা একাদশে পরিবর্তন নিয়ে কোনোরকম ইঙ্গিত দেননি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে আসা দলের ব্যাটিং কোচ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নয়, টুর্নামেন্ট। সুযোগ দেওয়ার চেয়ে সুযোগ করে নেওয়াই ভালো। সেরা একাদশে পরিবর্তন নিয়ে কোনো কথা হয়নি।’ ১৫ সদস্যের দলে এখন পর্যন্ত খেলেননি শুধু ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। টিম ম্যানেজমেন্টের যদি পরখ করে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে তাদের খেলার সম্ভাবনা আছে, নতুবা সফরসঙ্গী হয়েই তাদের ফিরতে হবে।
What's Your Reaction?






