স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিন : জামায়াত ইসলামীর

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিধি না থাকার কারণে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এজন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়েছেন তিনি। শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘বর্তমান একটা নির্বাচন কমিশন রয়েছে, তারা বলছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন নাকি উপহার দেবে। আমরা তাদের অ্যাসিড টেস্ট দেখতে চাই। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তাদের জাতীয় নির্বাচনে দেশ চলবে পাঁচ বছর। জনগণ এখন সাফার করছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিধি না থাকার কারণে। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দিন। আমরা দেখি আপনাদের সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা কতটুকু। যদি এতে জনগণ সন্তুষ্ট হয়, জনগণের পরবর্তী খেদমতের জন্য আপনাদের পূর্ণ সমর্থন করবে।’
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘নারী অধিকার সংস্কারের নামে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট জমা হয়েছে। সেই রিপোর্টের বেশ কিছু জায়গায় কোরআন ও সুন্নার সম্পূর্ণ খেলাপ কিছু সুপারিশ জমা হয়েছে। কিন্তু যারা এই সুপারিশ পেশ করেছেন তারা এ দেশের সাড়ে ৯ কোটি মায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা যে জায়গায় সমাজকে নিতে চায় সেটা হতে দেওয়া হবে না। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেই এটি বাতিলের জন্য আহ্বান জানানো হবে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী আমির বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য রমজানে কিছুটা সহনীয় ছিল, মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিল এখন আবার উত্তপ্ত হচ্ছে। আমরা সরকারকে বলব সেদিকে নজর দেন।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা সাড়ে ১৫ বছর এবং শেষ প্রান্তে এসে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা চালিয়েছে তাদের কাউকে আইনের বাইরে রাখবেন না। তাদের বিচার নিশ্চিত করুন। বিগত সরকার সাড়ে ১৫ বছরে যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে, তার পর্যাপ্ত ন্যায়ানুগ সংস্কার করুন। কালো টাকা এবং পেশি শক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সমস্ত মানুষের ভোট এবং সঠিক প্রতিনিধিত্ব সংসদে নিশ্চিত করার জন্য পিআর সিস্টেমে ভোট নিশ্চিত করতে হবে।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে জামায়াত আমির আরও বলেন, ‘আমরা শুনতে পারছি সংসদ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে– নিম্ন ও উচ্চ কক্ষ। মূল কর্তৃত্ব থাকবে নিম্ন কক্ষের হাতে। সেটা বর্তমান পদ্ধতিতে। আর উচ্চকক্ষের প্রস্তাবনা নেওয়া হয়েছে পিআর সিস্টেমে। উচ্চকক্ষ যদি পিআর সিস্টেমের প্রয়োজন হয় তাহলে নিম্ন কক্ষ নয় কেন? একই দেশে দুই কক্ষের প্রয়োজনটা কী; দুনিয়ার ৬২টা দেশ তারা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করে। সম্প্রতি ইউরোপ সফর করে আসলাম, সেই ইউরোপের ২৬টা দেশের মধ্যে ১৬টা দেশ পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করে। তারা যদি সেই সুফল ভোগ করতে পারে তাহলে আমরা জাতিকে বঞ্চিত করার কে?’
ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে এবং মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মো.রমজান আলী, নেত্রকোণা জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক সাদেক আহমেদ, মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতা উত্তম ভট্টাচার্যসহ অন্যরা।
সম্মেলন সকাল ৯টায় শুরু হলেও ৭টা থেকে জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিলে মিছিলে সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হন। ১১টার কয়েক মিনিট আগে মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো মাঠ।
What's Your Reaction?






