উল্লাপাড়ায় ৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় তিনজন পুলিশ সদস্যসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে শ্রবণশক্তি বিনষ্ট করা এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম (১৯) বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) উল্লাপাড়া আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। তিনি উপজেলার কানসোনা গ্রামের বাসিন্দা এবং উল্লাপাড়া মার্চেন্ট সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
মামলার আসামি তিনজন পুলিশ সদস্য হলেন- উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল হালিম, এসআই মো. মেজবাহ ও এএসআই আব্দুস সাত্তার। এই মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলার বালশাবাড়ি গ্রামের মো. রুবেল নামের এক যুবককে।
উল্লাপাড়া আমলি আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দীন বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিরাজগঞ্জকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজুরুল ইসলাম বলেন, উল্লাপাড়া থানা আমলী আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দীন বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে পিবিআই সিরাজগঞ্জকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামি উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হালিম বলেন, আপনি যেহেতু সাংবাদিক মানুষ, যেটি অথেনটিক খবর সেটিই প্রকাশ করবেন। আমি একটি খুনের তদন্তে ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে।
উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, ঘটনাটি সত্য নয়। তারা একটি অভিযোগ তদন্তে দিয়েছিল, এইজন্য সে মামলাটি করেছে। এটুকুই আমরা জানি। তদন্ত হলে ঘটনার সত্যতা উদঘাটন হবে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রধান আসামি মো. রুবেলের সঙ্গে শিক্ষার্থী জাহিদুলের ফেসবুকে পরিচয় ছিল এবং প্রায়ই ফোনে কথা হতো। ৯ আগস্ট রাতে রুবেল ফোন করে তাকে কৃষকগঞ্জ বাজারে দেখা করতে বলেন, কিন্তু তিনি অপারগতা জানান। কিছুক্ষণ পর রুবেল আবার ফোন করে গ্রামের মসজিদের কাছে থাকার কথা জানালে জাহিদুল সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। তখন রুবেল মোটরসাইকেল চুরির কথা উল্লেখ করে বাড়ি ফিরে যান।
ঘটনার দিন ১০ আগস্ট রাত ১টা ২৮ মিনিটে রুবেল আবার ফোন করে জাহিদুলকে বাড়ির পাশে ডাকেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, রুবেলের সঙ্গে আরও তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা মোটরসাইকেল চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই হালিম শিক্ষার্থী জাহিদুলের ডান কানে প্রচণ্ড থাপ্পড় মারেন, এতে কানের পর্দা ফেটে রক্তক্ষরণ হয় এবং তিনি শ্রবণশক্তি হারান। এ সময় অন্য আসামিরা গলা চেপে ধরে ও লাথি মেরে কোমর, পিঠ ও হাতে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠান।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দুই দিন পর এএসআই আব্দুস সাত্তার জাহিদুলের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে হুমকি দেন এবং এক সাক্ষীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। বাকি টাকার জন্য আসামিরা এখনও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং চাকরি ও জীবন নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছেন।
What's Your Reaction?






