হাইকোর্টের পাশে ২৬ টুকরা লাশ, বাল্যবন্ধুকে ঘিরেই সন্দেহ, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

Nov 14, 2025 - 22:16
 0  3
হাইকোর্টের পাশে ২৬ টুকরা লাশ, বাল্যবন্ধুকে ঘিরেই সন্দেহ, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
ছবি : সংগৃহীত

হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের কাছে ড্রাম থেকে ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁরই বাল্যবন্ধু জরেজ মিয়াকে সন্দেহ করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার নিহতের বোন আনজিরা বেগম শাহবাগ থানায় যে মামলা করেন, তাতেও আসামি জরেজ মিয়া। বর্তমানে তিনি পলাতক।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর আশরাফুলের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের কারণও জানা যায়নি। সিসিটিভির ফুটেজসহ তদন্তে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

শুক্রবার রংপুরের বদরগঞ্জের গোপালপুর নয়াপাড়া গ্রামে আশরাফুলের বাড়িতে দেখা যায়, স্বজনরা আহাজারি করছেন। তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। স্বামীর শোকে লাকী বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া বড় মেয়ে তাসমিন জাহান আশফি বাকরুদ্ধ। তার পাশে বসেই কাঁদছে ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আল হোসাইন।

স্বজনরা জানান, আশরাফুলের বাল্যবন্ধু গোপালপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আজাদ আলীর ছেলে জরেজ মিয়া। ১০ বছর আগে জরেজ মালয়েশিয়ায় যান। মাসখানেক আগে দেশে ফিরে দুজন একসঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। এবার জাপান যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন জরেজ। আশরাফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন। আশরাফুলও আশ্বাসও দিয়েছিলেন।

আশরাফুলের বাবা আবদুর রশিদ রংপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি। গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে বাবাকে দেখে বন্ধু জরেজসহ ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

বারবার মূর্চা যাচ্ছেন আশরাফুলের মা এছরা খাতুন। জ্ঞান ফিরতেই তিনি কাঁদতে থাকেন, ‘মোর বাবাক ওই জরেজই মারচে। গত এক মাস থাকি এই বাড়িত ওর আসা-যাওয়া মোর ভালো মনে হয় নাই। মোর সোনার টুকরা বাবাটাক যায় মারচে, মুই উয়ার ফাঁসি চাও।’

বাবা আবদুর রশিদ বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার আগে আশরাফুল হাসপাতালে আমাকে দেখতে এসেছিল। ওর সঙ্গে জরেজকে দেখে যেতে নিষেধ করেছিলাম। ও বলেছিল, বাবা সমস্যা নাই, আমার লোক আছে। তারা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি তো বাড়ি ফিরছি; আমার বাবা ফিরল না।’

আশরাফুলের প্রতিবেশী জাহিদ হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করেন আশরাফুল। তিনি ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতেন। ভালো আচরণসহ সুখে-দুঃখে এলাকাবাসীর পাশে থাকায় সবাই তাঁকে ভালোবাসত।

এজহারে বলা হয়, জরেজ পূর্ব কোনো শত্রুতার জেরে অথবা ব্যবসায়িক টাকা আত্মসাৎ করতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পরিকল্পিত খুনের শিকার হতে পারে।

আশরাফুলের স্ত্রী বলেন, আটকে থাকা ব্যবসার টাকা তোলার জন্য মঙ্গলবার জরেজকে নিয়ে ঢাকা যায় আশরাফুল। বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ ছিল। এরপরে দফায় দফায় ফোন দিলে রিসিভ করেন জরেজ। আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে একক সময় একেক কথা বলেন তিনি। কখনও বলেন আশরাফুল আমার কাছে ফোন রেখে কালেকশনে গেছে; কখনও বলেন, ওর ফোনটা ড্রেনে পেয়েছি, কোথায় আছে জানি না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কথা আছে বলে জরেজের স্ত্রীকে বাড়িতে ডেকে নিই। সে জরেজকে ফোন দিলে, একই ধরনের কথা বলেন। পরে তাঁর স্ত্রী আমাকে বলেন, কী ঘটেছে, রাতে মোবাইলে খবর পাওয়া যাবে।

আশরাফুলের শ্যালক রেজওয়ান মিয়া জানান, পাওনা টাকা না দেওয়ায় বছর পাঁচেক আগে আশরাফুল টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুস সামাদের নামে মামলা করেন। পরে ওই ব্যবসায়ী জেলও খাটেন। গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আশরাফুল টাকা আনতে ঢাকা যান। যাওয়ার আগে কোল্ডস্টোরেজের সাত হাজার বস্তা আলু বিক্রি করে তিন লক্ষাধিক টাকা সঙ্গে নিয়েছিলেন। সবকিছুই জানতেন জরেজ।

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হয়তো জরেজই নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। সঠিক তদন্তের মাধমে হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow