উৎসব আনন্দে ভরে উঠেছে কালিয়াকৈরের ১৩৯ মন্দির, শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত চারপাশ

শাকিল হোসেন, গাজীপুর (কালিয়াকৈর) প্রতিনিধি
ঢাকের তাল আর শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত চারপাশ, ভোরের সূর্যের প্রথম কিরণেই ধ্বনিত হলো দেবী দুর্গার আগমন বার্তা। সারাদেশের ন্যায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলাতেও গত রবিবার মহালয়ার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। ভক্তদের মনে এখন কেবল আনন্দ নয়, রয়েছে গভীর ধর্মীয় শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভক্তি।
শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল উৎসবের আমেজ নয়, ভক্তির আরাধনা, এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এক মহৎ ধর্মীয় সাধনার উপলক্ষ। ভক্তদের বিশ্বাস মা দুর্গা অসুর দমন করে পৃথিবীতে শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনেন। তাই পূজার প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান জুড়ে থাকে ভক্তদের আন্তরিকতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রকাশ। পুষ্পাঞ্জলি, আরতি, সন্ধিপূজা কিংবা কুমারী পূজা সবকিছুতেই ভক্তরা দেবীর অশেষ কৃপা লাভের প্রার্থনা করে থাকেন।
এবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৪৯টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। প্রতিমা নির্মাণ, মণ্ডপ সাজানো, আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে নিরাপত্তার সব প্রস্তুতিই প্রায় শেষ। রঙিন আলো, ফুল আর ধূপ-ধুনোর গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে পূজামণ্ডপগুলো। সর্বত্রই এখন সাজসজ্জার সরব পরিবেশ, যা ভক্তদের মনে আনন্দের সঞ্চার করছে। শারদীয় দুর্গাপূজার এ সময়ে কালিয়াকৈরসহ সারাদেশে ভক্তদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে একই সুর “দুর্গতি নাশিনী মা, তুমি এসো, শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনো।”
আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার পঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর যথাক্রমে ষষ্ঠী, সপ্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমী পালন করা হবে। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পূজামণ্ডপগুলো মুখরিত থাকবে ভক্তদের সমাগমে। দেবীর সামনে প্রার্থনা, আরতি, ভজন ও শাস্ত্রপাঠে মুখরিত হবে সর্বত্র। শেষ দিনে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানাবেন ভক্তরা। বিসর্জনের সময় ভক্তদের চোখে থাকবে অশ্রু, ঠোঁটে থাকবে প্রার্থনা—“মা, আবার এসো।” দেবীকে বিদায় জানিয়ে ভক্তরা আবারও অপেক্ষা করবেন আগামী বছরের পুনরাগমনের জন্য।
প্রতিবারের মতো এবারেও পূজার নির্বিঘ্ন আয়োজন নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্দিরে সরকারি অনুদান ৫০০ কেজি করে মোট ৬৯৫০০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপজেলায় প্রায় এক হাজার আনসার সদস্য ও ১৩৯ জন পুলিশ সদস্য সহ টহল পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা। প্রতিটা পূজা মন্ডপে ৮ থেকে ৬ জন করে আনসার সদস্য এবং একজন করে পুলিশ সদস্য থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে—শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভক্তরা যেন নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারেন, সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে সর্বত্র এখন আনন্দ-উৎসবের আমেজ থাকলেও এর কেন্দ্রে রয়েছে গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। এ উৎসব ভক্তদের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি এটি এক আত্মিক সাধনার সময়। সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় ভক্তরা দেবীর চরণে নিবেদন করছেন প্রার্থনা।
What's Your Reaction?






