তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, পানিবন্দি ২০ হাজার পরিবার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার তিস্তার বাম তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আতঙ্কে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন। পানির চাপে কয়েকটি রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জের দক্ষিণ ভোটমারীর ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকায় ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এটি ভেঙে গেলে পানি সরাসরি কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে প্রবেশ করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ডালিয়া পয়েন্টে ১৪ আগষ্ট বিকাল ৩টায় তিস্তার পানির উচ্চতা ৫২.৩০ মিটার, যা বিপদসীমা (৫২.১৫ মিটার) থেকে ১৫ সেন্টিমিটার বেশি। এতে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল কবির জানান, সোলার প্যানেল স্থাপনের ফলে নদীর গতিপথ বদলে গিয়ে লোকালয়ের বাঁধ ও রাস্তায় পানির চাপ পড়ছে। এগুলো রক্ষা করা না হলে হাজারো বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।
পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দিনমজুর সামসুল আলম বলেন, পানি ঢুকে রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে, পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ সবাই চরম বিপাকে আছে। প্রশাসনের দ্রুত সহযোগিতা দরকার।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, ফসল ও রাস্তাঘাট পানির নিচে ডুবে আছে, মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হলেও স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে কিছু প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা খুব দ্রুত বিতরণ করা হবে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। বন্যাদুর্গত এলাকার সর্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
What's Your Reaction?






