জব্দকৃত ২৫ কেজি ইলিশের ২০ কেজিই উধাও!

Oct 22, 2025 - 01:55
 0  3
জব্দকৃত ২৫ কেজি ইলিশের ২০ কেজিই উধাও!
ছবি : সংগৃহীত

পাবনা প্রতিনিধি

ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহণ, বিক্রি ও মজুদের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ২৬ টি অভিযানে ২৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ হলেও ২০ কেজিই উধাও হয়ে গেছে।

মা ইলিশ সংরক্ষণের এই অভিযানে দেশের অন্যান্য নদীর মতো পদ্মা নদীতেও চলছে কড়া নজরদারি। পদ্মা নদী পাবনা জেলার মধ্য দিয়ে বিশেষ করে সদর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ বয়ে গেছে।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন পাবনা জেলার অভিযানের পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তি। জেলা মৎস্য দপ্তর ও সদর উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য একে অপরের সঙ্গে মিলছে না।

পাবনা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জানান, ৪ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তারা ২৩টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসব অভিযানে ৫ কেজি ইলিশ মাছ এবং ৩২ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত জালের বাজারমূল্য আনুমানিক ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে জেলা মৎস্য অফিসার দীপক কুমার পাল বলছেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত ২৬টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখানে ২৫ কেজি ইলিশ মাছ এবং ৮১ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে, যার মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

এই তথ্যের মধ্যে বিশাল অমিলই এখন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে— আসলে পাবনায় অভিযান কতটি হয়েছে এবং কতটুকু ইলিশ ও জাল জব্দ হয়েছে?

শুধু তাই নয়, উপজেলা অফিস দাবি করছে—সবগুলো অভিযানই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা এসিল্যান্ড উপস্থিতিতে এবং অবগতিতে পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু এসিল্যান্ড জানিয়েছেন, তিনি মাত্র একটি অভিযানে স্ব শরীরে উপস্থিত ছিলেন এবং ৫টি অভিযানের বিষয়ে জানেন, বাকি অভিযানের কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম আরও জানান, আমাদের অফিসে মোট তিনজন কর্মকর্তা রয়েছি। এর মধ্যে দুইজন ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট মা ইলিশ অভিযানে অংশ নিতে অন্য জেলায় প্রেরিত হয়েছেন—একজন ফরিদপুরের ভেদরগঞ্জে এবং অন্যজন কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। ফলে জনবলের অভাবে অভিযান কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

তবে এখানেই নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বিষয়টি। যখন পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় ইলিশ ধরা প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযানের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি, তখন কীভাবে একটি উপজেলার মাত্র তিনজন কর্মকর্তার মধ্যে দুইজনকে অন্য জেলায় পাঠানো হলো?

স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি প্রশাসনিক পরিকল্পনার ঘাটতি নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে জনবল শূন্য রেখে মাঠ পর্যায়ের অভিযান দুর্বল করে দেওয়ার কৌশল হতে পারে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন— এতে কি ইলিশ শিকারিদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না?

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের কঠোর অবস্থান সফল করতে হলে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় আরও জোরদার করা জরুরি।

স্থানীয়রা বলছেন, ইলিশ রক্ষায় সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ সফল করতে হলে মাঠ পর্যায়ের তদারকি আরও শক্তিশালী করা জরুরি। কারণ, সরকারি তথ্যেই যখন এমন অমিল দেখা যায়, তখন প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

মৎস্যজীবীদের দাবি, প্রশাসনের এক অংশ অভিযান চালাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও কোথাও সমন্বয়ের অভাব ও জনবলের ঘাটতি কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে।

ফলে প্রশ্ন উঠছে—পাবনায় পদ্মার তীরে ইলিশ ধরার অভিযানে আসল সত্যটা কী? সরকারি তথ্যের ভেতরে এমন অসঙ্গতি প্রশাসনিক সমন্বয়ের ঘাটতিকে স্পষ্ট করে তুলছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow