তিব্বতে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন চীনের, পানিপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ও ভারত

Jul 20, 2025 - 22:06
 0  2
তিব্বতে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন চীনের, পানিপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ও ভারত
ছবি : সংগৃহীত

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং শনিবার তিব্বতের মালভূমিতে একটি বিশাল বাঁধ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বে ন্যিংচি শহরে অবস্থিত ইয়ারলুং সাংপো নদীর নিম্নপ্রবাহে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন লি কিয়াং।

এই ইয়ারলুং সাংপো নদীই তিব্বত ছাড়িয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম রাজ্যে প্রবেশ করার পর ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

চীন ২০২০ সালে তাদের পাঁচ বছরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রথম ঘোষণা করে। তিব্বতের বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। প্রকল্পটি গত ডিসেম্বরে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পটি বছরে আনুমানিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ থ্রি গর্জেস ড্যামের তুলনায় তিন গুণ বেশি।

তবে এই প্রকল্প ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। তারা আশঙ্কা করছে, এই বাঁধের কারণে পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। পাশাপাশি রয়েছে জনবসতি উচ্ছেদ, পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি এবং 'পানির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির কৌশল' হিসেবে এ বাঁধ ব্যবহারের আশঙ্কা—যার মাধ্যমে চীন ইচ্ছাকৃতভাবে বন্যা বা খরার সৃষ্টি করতে পারে।

চীন অবশ্য দাবি করছে, প্রকল্পটি নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে সুপরিকল্পিত মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং এটি ভাটির দেশগুলোর পরিবেশ, ভূ-প্রকৃতি কিংবা পানির অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। বেইজিং আরও বলেছে, তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষতির বিনিময়ে কোনও লাভের চেষ্টা করছে না।

বরং, প্রকল্পটি দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রশমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য সহায়ক হবে বলেই দাবি করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এই প্রকল্পের প্রতিক্রিয়ায় ভারতও ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর অরুণাচল প্রদেশে নিজস্ব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে করে পানিসম্পদের ওপর নিজের অধিকার জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।

ভারতের দাবি, অরুণাচল প্রদেশ দেশটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও চীন এটিকে দক্ষিণ তিব্বতের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে এবং সেখানে ভারতের অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নেও আপত্তি জানায়।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, তিব্বতে এই মেগা প্রকল্পে মোট পাঁচটি ক্যাসকেড জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকবে এবং এতে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করা হবে।

প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ মূলত দেশের অন্যান্য অংশে সরবরাহ করা হবে। তবে তিব্বতের স্থানীয় চাহিদাও এর মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

শনিবার সিনহুয়ার আরেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, 'চায়না ইয়াজিয়াং গ্রুপ' নামে নতুন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে, যা প্রকল্পের মালিক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করবে।

প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ঝাং গোছিং বলেন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি নির্বিঘ্নে বাস্তবায়নের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow