ভুল সিদ্ধান্তে যেন ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ না পায় : তারেক রহমান

কোনো ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যেন ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। কোনো আবেগতাড়িত বা ভুল সিদ্ধান্তে যাতে চরমপন্থা বা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
শনিবার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে’ এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় জীবনে আসন্ন নির্বাচনে ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং আপনাদের, আমাদের এবং আমাদের সকলের কোনো আবেগতাড়িত কিংবা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে সমগ্র দেশবাসীকে সতর্ক এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ফ্যাসিবাদের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রয়োগ এবং চর্চার কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, রাষ্ট্রের অপব্যবহার বা প্রশাসনিক কূটকৌশলের পরিবর্তে কারও রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের প্রধান মাধ্যম হওয়ার দরকার জনগণের রায়, আস্থা এবং বিশ্বাস। দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে আমাদের কোনো আয়োজনই শেষ পর্যন্ত কিন্তু কোনো কাজে আসবে না, টেকসই হবে না।
দেশে নৃশংস হত্যাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ এবং সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশে গণতন্ত্রবিশ্বাসী জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। গণতন্ত্রবিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো পাশে থাকবে, যদি আপনাদের ভূমিকা আরও স্বচ্ছ এবং সাহসী হয়।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত কিছু নৃশংস এবং অনাহূত ঘটনা জনমনে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতাকে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কেউ দেশে উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কিনা, বিষয়টি জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা, কোনো কোনো মহল থেকে এমন ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন আজ বিচ্ছিন্ন বক্তব্য হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতির সময় জাতীয় নির্বাচন কেউ সময়ক্ষেপণ চাইছে কিনা, এ ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি গণতন্ত্রকামী জনগণ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনরত দলগুলোসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
দেশবাসীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি ইনসাফ এবং ন্যায়ভিত্তিক ও তাঁবেদারমুক্ত গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আজ আমরা শহীদদের প্রতি সত্যিকারভাবে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানাতে পারি। হাজারো শহীদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার পূর্বশর্ত হচ্ছে, জনগণ তাদের সরাসরি ভোটে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক নিরাপদ নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকা জরুরি, যেখানে প্রত্যেক ভোটার নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিলের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু হোরায়রাসহ গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজন এবং আহত আল মিরাজসহ অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির নেতারা বক্তব্য দেন। শহীদ পরিবারের বক্তব্যে আপ্লুত হয়ে পড়ে পুরো মিলনায়তন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও অনেক নেতাকর্মীকে চোখ মুছতে দেখা গেছে।
What's Your Reaction?






