এলজিইডির কনসালটেন্ট আবু ফাত্তাহ’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ আবু ফাত্তাহ। কখনো সাংবাদিক, কখনো সম্পাদক। কখনো বা এলজিইডি’র পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআরও) হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। আবার কখনো নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন তিনি। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো বহুরূপী এই প্রতারককে যিনি নিজেকে নানা ভাবে পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে বিভিন্ন প্রতারণা করে আসছেন।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া উপজেলার মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আবু ফাত্তাহ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সুপারিশে এলজিইডিতে মোটা অংকের বেতনে মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসেবে চাকরি পান আবু ফাত্তাহ। এলজিইডিতে যোগদানের পূর্বে একটি অখ্যাত দৈনিক পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছে কিছু দিন। তবে এলজিইডিতে যোগদানের পরেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন আবু ফাত্তাহ। সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রভাব বিস্তার করে আতাতের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেন তিনি। প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সবার কমিশন ঠিক-ঠাক মতো নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও তার।
অনুসন্ধান বলছে, প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অনেক প্রধান প্রকৌশলী অবসরে গেল, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন মিডিয়া কনসালটেন্ট ফাত্তাহ। পুরো আওয়ামী সরকারের আমলে প্রভাব খাঁটিয়ে মিডিয়া কনসালটেন্সির আড়ালে বিভিন্ন প্রকল্পে চাকরির তদবির-বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর চাকরি বাঁচাতে রাতারাতি ভোল পালটে নিজেকে বিএনপিপন্থী একজন হিসেবে জাহির করছেন তিনি।
শুধু তাই নয় এলজিইডি ভাবনে অপেশাদার বা ভূইফোড় সাংবাদিকদের দৌরাত্ম রয়েছে। ফাত্তাহ তাদের কাছে বিভিন্ন প্রকৌশলীদের দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকার এসব কার্ডধারী পত্রিকার সাংবাদিককে নির্দিষ্ট প্রকৌশলীর কাছে পাঠিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন। পরে দায়িত্ব নিয়ে ওই সাংবাদিককে ম্যানেজ করার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন ফাত্তাহ নিজেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সংবাদ প্রকাশের জন্য আগারগাঁও এলজিইডি ভবনে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষাতকার অথবা বক্তব্য নেওয়ার জন্য সাংবাদিক প্রবেশ করলে তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে যান। এবং কী বিষয়ে এসেছেন তা জানতে চান। পরে ওই সাংবাদিককে তিনি নিউজ না করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে কখনো কখনো বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব করেন। কখনো তিনি নিজেকে বড় সাংবাদিক দাবি করে প্রভাব বিস্তার করেন। তার নিজের একটি পত্রিকা অফিস আছে এবং তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক বলেও দাবি করেন ফাত্তাহ।
গত ১৫ বছর দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বুনেছেন আবু ফাত্তাহ। রাজধানীতে বহুতল ভবনের ২টি বাড়ি, উল্লাপাড়া পৌর শহরে বহুতল ভবনের ১টি বাড়ি, নিজ এলাকায় শত বিঘা জমি এছাড়াও একাধিক ব্যাংক একাউন্টে নামে বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডি’র একাধিক প্রকৌশলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফাত্তাহ'র অত্যাচারে ভবনের অনেক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতঙ্কে থাকেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
What's Your Reaction?






