দক্ষিণ সিরিয়ায় সহিংসতায় নিহত প্রায় ৬০০, বলছে পর্যবেক্ষক সংস্থা

Jul 18, 2025 - 13:09
 0  3
দক্ষিণ সিরিয়ায় সহিংসতায় নিহত প্রায় ৬০০, বলছে পর্যবেক্ষক সংস্থা
ছবি : সংগৃহীত

সরকারি বাহিনী দ্রুজ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সুয়েইদা ছাড়লেও সেখানকার বেশিরভাগ অংশেই এক ধরনের অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করছে।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৫৯৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটিতে সংঘাত-সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করা একটি সংস্থা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) রোববার থেকে সুয়েইদা প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া বিস্তৃত সহিংসতায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোতে নজিরবিহীন বর্বরতা নথিভুক্ত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের ৩০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে, এদের মধ্যে ১৪৫ জন যোদ্ধা, বাকিরা বেসামরিক। এদের মধ্যে ৮৩ জনকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ‘নির্বিচারে হত্যা’ করেছে বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে এসএওএইচআর।

সরকারি বাহিনীর ২৫৭ জন ও ১৮ বেদুইন যোদ্ধাও নিহত হয়েছে। তিন বেসামরিক বেদুইনকে দ্রুজ যোদ্ধারা মেরে ফেলেছে, বলেছে তারা।

বেদুইন আর দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

ইসরায়েলি হামলায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ১৫ জন নিহত হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। তেল আবিব বলছে, তারা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সুয়েইদা ছাড়া নিশ্চিত করতে এবং দ্রুজদের রক্ষার উদ্দেশ্যে ওই বিমান হামলা চালিয়েছিল।

এসওএইচআর নিহতের যে সংখ্যা দিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

সিরিয়ার নিরাপত্তা সূত্রগুলো সংঘাতে নিহতের সংখ্যা ৩০০ বলে জানিয়েছে। আরেকটি পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তারা অন্তত ১৬৯ বেসামরিক নিহতের তথ্য নথিভুক্ত করেছে।

বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনী দ্রুজ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সুয়েইদা ছাড়লেও সেখানকার বেশিরভাগ অংশেই এক ধরনের অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করছে। বাসিন্দারা লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের চিত্রের পাশাপাশি রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকার কথা জানিয়েছেন।

দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে সংঘাতের পর শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোমবার সিরিয়ার ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বাধীন সরকারের যোদ্ধাদের সাঁজোয়া বহর একে একে সুয়েইদা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে।

কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠে, সংঘাতের মাত্রা তীব্রতর হয়ে ওঠে এবং সিরিয়ার দ্রুজদের মধ্যে বিভক্তি বেড়ে যায়। ইসলামের শিয়া ঘরানার একটি শাখা হলেও দ্রুজদের নিজস্ব পরিচয় ও বিশ্বাস রয়েছে।

সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আগে সিরিয়ার সরকার বুধবার ওই এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

কিন্তু এ যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন দ্রুজদের এক সুপরিচিত নেতা শেখ হিকমত আল-হাজরি, তিনি সরকারি বাহিনীর হাত থেকে ‘প্রদেশ সম্পূর্ণ মুক্ত না করা পর্যন্ত’ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

তার অনুসারীরাই সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে, এরা ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গড়তে চায়। দ্রুজদের বাকি অংশগুলো সিরিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে থাকতে আগ্রহী।

এদিকে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ায় ইসরায়েল তার স্বার্থ হাসিলে বলপ্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।

সংঘাতে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের পেছনে দ্রুজদের রক্ষা ছাড়াও আরেকটি কারণ রয়েছে। সেটি হল- সিরিয়া যেন কোনোভাবেই তাদের সামরিক বাহিনীকে দেশের দক্ষিণে মোতায়েন করতে না পারে।

“আমরা এই নীতি নিয়েও এগিয়ে যাবো। আমরা সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে দামেস্কের দক্ষিণের অঞ্চলে ঢোকার সুযোগ দেবো না, আমরা দ্রুজদের কোনো ক্ষতি হতে দেবো না,” বলেছেন নেতানিয়াহু।

বুধবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশেও তুমুল হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী দেশটিতে নেতানিয়াহুর বাহিনীকে নিয়মিতই হামলা চালাতে দেখা যাচ্ছে।

বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেছেন, ইসরায়েল সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় হামলা চালাচ্ছে।

তার সরকারের ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ তালিকার দ্রুজদের অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি আছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow