সংখ্যালঘু হত্যা-সহিংসতায় সাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ মেলেনি : পুলিশ সদরদপ্তর

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গত ১১ মাসে মোট ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ জানিয়েছে, ঐক্য পরিষদের সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। এতে সাম্প্রদায়িকতার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পুলিশ সদরদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৭ মৃত্যুর ঘটনায় ২২টিতে নিয়মিত হত্যা মামলা এবং ৫টির ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুইজনের প্রাণহানি হয়। তারমধ্যে একটি- ভাতিজা হত্যা করেছে চাচাকে। আরেকটি হত্যার ঘটনা চাচাতো ভাইদের মধ্যে মারামারির। আর্থিক লেনদেনের জেরে দুইজনের প্রাণহানি হয়। তারমধ্যে মাদক কেনাবেচার টাকা পাওনা নিয়ে একজন ও অপরটি ডাকাতির ঘটনা।
পুলিশ সদরদপ্তর আরও জানায়, দস্যুতার ঘটনায় ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে একজন, তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারিতে আরেকজন নিহত হয়। গলায় ফাঁস নিয়ে তিনজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ১১ জনের। এদের মধ্যে রয়েছে ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন। জুম চাষে গিয়ে নারী নিহত, তামাক ক্ষেত থেকে পাতা কুড়াতে যাওয়া নারীর মৃতদেহ উদ্ধার, বাড়ির পাশ হতে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাকেও সংখ্যালঘু হত্যা বলে দাবি করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এসব হত্যার ঘটনায় এরইমধ্যে মোট ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৫ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এদের ১৮ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তদন্তে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ তাদের সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে, গত ১১ মাসে সংখ্যালঘু ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ২০টি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ভাষ্য, এরমধ্যে ১৬টি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং পুলিশ ২৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি ঘটনায় এখনও কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। রাজশাহীর তানোরে এক আদিবাসী নারী ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। অভিযোগকারীর সঙ্গে অভিযুক্তের আগে থেকেই পারিবারিক বিরোধ ছিল বলে জানা গেছে। মাগুরার শ্রীপুরের হরিনন্দীগ্রামে ডাকাতির পর গৃহবধূ গণধর্ষণের অভিযোগও তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়নি এবং কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।
এ সময় জানানো হয়, গত বছর ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয় ঘিরে ১২৭টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা এবং ৬১টি ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। মামলাগুলোয় মোট ৬৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
এতে বলা হয়, মন্দির বা পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা বা স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল ও উচ্ছেদের চেষ্টা সংক্রান্ত ৬০টি অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানায়, এসব ঘটনার মধ্যে ২০টি চুরির ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে। যার মধ্যে ১৪টি নিয়মিত মামলা এবং ৫টি জিডি হয়েছে। প্রতিমা বা মন্দির ভাঙচুরের ২৪টি ঘটনার মধ্যে ১৮টি মামলা এবং ৪টি জিডি হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১০ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। একটি চুরি এবং দুটি ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পুলিশ বলছে, অগ্নিসংযোগের চারটি ঘটনার মধ্যে দুইটির পেছনে কোনো নাশকতার প্রমাণ মেলেনি। জমি ও সীমানা নিয়ে জটিলতা ছিল এমন চারটি ঘটনার দুইটি স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়েছে। ছয়টি জায়গা দখলের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। খিলক্ষেতের বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় থাকা অস্থায়ী পূজামণ্ডপ উচ্ছেদ করা হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ভাঙার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন করে শ্মশানঘাট নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা জানায়, সংঘটিত ঘটনাসমূহ পরে সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখবে তারা। এমনকি অন্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনায় তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সব স্থাপনা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
What's Your Reaction?






