অনলাইন জুয়ায় জড়িত ১ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু

অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুয়ার সঙ্গে জড়িত এক হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোমবার (২৬ মে) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
২১ মে জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২০ ধারা অনুসারে জুয়া খেলা এবং জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। এই আইন অনুসারে, সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার জন্য কোনো পোর্টাল, অ্যাপস, ডিভাইস তৈরি ও পরিচালনা করা, জুয়া খেলা, খেলায় সহায়তা বা উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়া এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচার বা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জড়িত থাকা দণ্ডনীয় অপরাধ।
২১ এবং ২২ ধারা অনুযায়ী, জুয়া খেলার জন্য কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন, জুয়া খেলা বিষয়ে কোনো প্রতারণা বা জালিয়াতি করাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক বার্তায় জানিয়েছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের জুয়া খেলা নিয়ে কোনো বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো নাগরিক, সম্মানিত ব্যক্তি বা সেলিব্রেটি যদি মনে করেন, তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট বা পোর্টালে তাঁর ছবি অথবা ভিডিও ব্যবহৃত হচ্ছে তাঁকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
এই আইন (সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ) প্রণয়নের পূর্বে যারা জুয়া খেলার সঙ্গে বা জুয়া খেলার বিজ্ঞাপনের সঙ্গে স্বেচ্ছায় জড়িত ছিলেন তাদেরকে অবিলম্বে এই কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। যারা পূর্বে জুয়ার কারণে প্রতারণার শিকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণকে সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা এবং জুয়া খেলা সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার এবং এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা কোম্পানির ব্যাপারে তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বার্তায় বলা হয়েছে, জুয়া একটি সামাজিক ব্যাধি এবং সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার কারণে দেশে অসংখ্য ব্যক্তি সর্বস্বান্ত হয়েছে, অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণের কাছে সরকার সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।
সরকার ইতিমধ্যে ১ হাজার ১০০ এর অধিক এজেন্ট শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এমন কার্যক্রমের সঙ্গে যে সকল মোবাইল ফাইনান্সিং এজেন্ট, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি কোনো ব্যক্তি এসব অপরাধ সংগঠিত করেন তবে তিনি অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বিষয়ে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা, ফাইন্যান্সিয়াল স্ক্যাম, জুয়ার লেনদেনের (ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ) সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তি, সেলিব্রেটি, বিভিন্ন পেশাজীবী, অপারেটর, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম, এমএফএস এজেন্ট, ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাশাপাশি অনলাইন জুয়ায় জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবী, বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানি, মিডিয়া বায়ার, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিজ্ঞাপন গ্রহীতা সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তাই যেকোনো জুয়ার অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত মোবাইল ব্যাংকিং, রেগুলার ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেকোনো এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর কিংবা কোনো ক্রিপ্টো ব্রোকার কিংবা হুন্ডির অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানাতে নিম্নোক্ত মেইলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে- notify@ncsa. gov. bd
What's Your Reaction?






