খেলাপি ঋণ ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ

Sep 17, 2025 - 02:01
 0  1
খেলাপি ঋণ ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ
প্রতীকী ছবি

বিশেষ বিবেচনায় আরও খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠন করতে পারবে ব্যাংকগুলো। মাত্র দুই শতাংশ ডাউন-পেমেন্টের বিপরীতে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা যাবে। দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড এবং সংশ্লিষ্ট খাতের সর্বনিম্ন সুদহারের চেয়েও এক শতাংশ কম সুদ নির্ধারণ করা যাবে। ব্যাংকগুলোই এসব সুবিধিা দিতে পারবে। কোনো কারণে প্রয়োজন হলে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে নীতি সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাছাই কমিটিতে আবেদন করা যাবে।

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠনসহ নানা সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। সরকার পতনের পর তা হুহু করে বাড়ছে। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরকম অবস্থায় গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দিচ্ছিল। এখন তা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হলো।

আজকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন বিরূপ মানে শ্রেণীকৃত ঋণে পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতপশিল করা যাবে। এ জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ৬ মাসের মধ্যে ব্যাংক থেকে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। নীতি সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট চেক বা অন্য কোনো ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে দিলে তা নগদায়নের পর হতে ৬ মাস গণনা করতে হবে। ডাউন পেমেন্টের অর্থ ব্যাংকের অনুকূলে নগদায়নের আগে নীতি সহায়তার আবেদন কার্যকর করা যাবে না। ইতোপূর্বে তিন বা তার বেশি পুনঃতপশিল করা ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ ডাউন-পেমেন্ট আদায় করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নীতি সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হবে না। তবে এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হতে অনুমোদন নিতে হবে। একাধিক ব্যাংক হতে ঋণের বিপরীতে নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা সকলের সম্মতিতে নীতি সহায়তার উদ্যোগ ও সভার আয়োজন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। ৩০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ স্থিতির ঋণগ্রহীতাকে নীতি সহায়তার বিষয়ে ব্যাংক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না হলে আন্তঃব্যাংক সভার কার্যবিবরণী বা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ‘ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাই কমিটি’ বরাবর আবেদন পাঠাতে হবে।

বিশেষ সুবিধা দেওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। বিশেষ সুবিধা পাওয়া ঋণ এসএমএ মানে শ্রেণীকরণ করে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। প্রকৃত আদায় ছাড়া ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য স্থানান্তর করা যাবে। এ ধরনের সুবিধা দেওয়া ঋণে নতুন সুবিধা দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অতীত লেনদেনসহ সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। আর ২০২২ সালে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাকিতে খোলা এলসির ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ গতবছর জারি করা সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী হিসাবায়ন করতে হবে। কোনো গ্রাহক চাইলে পুনর্গঠন বা এককালীন এক্সিট সুবিধা নিতে পারবে।

জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোন ধরনের প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণের ক্ষেত্রে এ সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধা দেওয়া যাবে না। ব্যাংক থেকে চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধাদি পাবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ক্ষতির পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে পুনঃতপসিল, পুনর্গঠন বা এক্সিটের মেয়াদকাল নির্ধারণ করতে হবে। মেয়াদকাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত স্মারকে এবং সভার কার্যবিবরণীতে সুস্পষ্ট কারণ সুনির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে। সুবিধা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার স্থগিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তীতে কোনো গ্রাহকের দেওয়া সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সকল সুবিধা বাতিল বলে হবে এবং ব্যাংক ঋণ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow