ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাদ্য সরবরাহ না করেই অর্থ লোপাট

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ রোগীর খাদ্য সরবরাহে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত পরিমাণের কম এবং পথ্য স্কেলে খাবারের তালিকা থাকলেও সব খাবার পাচ্ছেনা রোগীরা। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন ওয়ার্ডে খাদ্য তালিকা না থাকায় এ নিয়ে কেউ সাড়াশব্দ করতে পারেন না।
৫ আগস্ট দুপুরের খাবারের সময় সরেজমিনে দেখা যায়, সাদা ভাত, সবজি, ব্রয়লারের ১ পিছ মাংস যার ওজন আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম এবং ১ পিছ বিস্কুট। সরকারি পথ্য স্কেল অনুযায়ী দুপুরের খাবারে ভাত, ডাল, সবজি এবং মাছ/ মাংস থাকার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার মশুরের ডাল সরবরাহ করে না। বিকালের নাস্তায় ৫ টাকা মূল্যের ১ টি বিস্কুট এবং ৬ টাকা মূল্যের একটি কলা থাকার নিয়ম থাকলেও শুধুমাত্র বিস্কুট দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন একজন রোগীর জন্য চিনি বরাদ্দ থাকে ৭৫ গ্রাম যা মোটেও বিতরণ করা হয় না। মশুরের ডাল বাবদ বরাদ্দ ১১ টাকা এবং চিনির বরাদ্দ ৯ টাকা মোট ২০ টাকা যা কোন রোগীই পাচ্ছে না।
উপস্থিত এক রোগীর সাথে খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হসপিটালে ২০ দিন যাবৎ ভর্তি আছি এখানে সকালের নাস্তায় ডিম, রুটি এবং ছোট সাইজের ১ টি কলা সরবরাহ করা হয়। দুপুরের খাবারে ভাত, সবজি এবং ছোট সাইজের মাছ/ মাংসের পিছ সরবরাহ করে। মশুরের ডাল দেওয়া হয় না। রাতের খাবারগুলো খুবই নিম্নমানের ঠান্ডা ভাত তরকারী বিতরণ করা হয় যা আমিসহ কোন রোগীই খেতে পারেনা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেহেতু ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গড় যদি প্রতিদিন ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকে তাহলে তাদের মশুর ডাল মাথাপিছু ১১ টাকা এবং চিনি ৯ টাকা মোট ২০ টাকা হলে প্রতিদিন দুর্নীতি হচ্ছে ৮০০ টাকা যা মাসে ২৪০০০/- হাজার টাকা এবং বছরে দাঁড়ায় ২৮৮০০০/- (২ লাখ আটাশি হাজার) টাকা যা রিতিমত পুকুর চুরির মত ঘটনা।
এমন দুর্নীতির বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিনা এন্টার প্রাইজ এর কর্ণধারকে ফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমার বাসা জয়পুরহাট সদরের হওয়ায় রানীগঞ্জ বাজারের বকুল নামের এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করেছি এত বড় দুর্নীতির বিষয়ে আমার তেমন কোন ধারনা নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বকুল নামের ওই ব্যক্তি মূল ঠিকাদারের নিকট থেকে টাকার বিনিময়ে খাদ্য সরবরাহের কাজটি ক্রয় করেছেন। টাকার বিনিময়ে সরবরাহের কাজটি বিক্রয়ের বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
এবং তিনি বলেন, এভাবে সাব কন্ট্রাকে কাজ করার কোন আইনি বৈধতা নেই। বিগত কয়েক বছর যাবৎ বকুল হসপিটালের কিছু অসাধু ব্যক্তির সহায়তায় মূল ঠিকাদারের নিকট থেকে এভাবে খাদ্য সরবরাহের কাজটি ক্রয় করে থাকেন যা নিয়ে সকলেই নিরব ভূমিকা পালন করে।
হাসপাতালে খাবার সরবরাহের দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন (মেহেদী) জানান, আমাদের হসপিটালে বাবুর্চি না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
What's Your Reaction?






