চবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানার, ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা

Nov 2, 2025 - 21:28
 0  3
চবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানার, ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা
ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের আবাসিক আলাওল হলের গেটের সামনের দেয়ালে গভীর রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুটি ব্যানার টানানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এতে অনেকে প্রশাসনের নীরবতাকেও দায়ী করছেন।

গতকাল শনিবার গভীর রাতে সংগঠনটির নাম ও নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার দুটি টানানো হয়। আজ রোববার সকালে শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ার পরপরই ব্যানার দুটি সরিয়ে ফেলা হয়। দুটি ব্যানারেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিল। একটিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছবি ব্যবহার করা হয়। নিচে লেখা ছিল—‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ’। অন্যটিতে ইংরেজিতে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট লীগ লেখা ছিল। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’ ক্যাপশন দিয়ে ব্যানারের ছবি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি ঘিরে অনলাইনেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি স্থানে রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যানার টানানো হয়েছে। তারা ভুলে গেছে এটা শহীদ তরুয়া ও শহীদ ফরহাদের রক্তসিক্ত পবিত্র ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের কোন ছাড় নয়।’

জিএস সাঈদ বিন হাবিব ফেসবুকে লেখেন, ‘আলাওল হল গেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ব্যানার সাঁটিয়েছে গতরাতে। অভ্যুত্থানের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লীগের দোসর, চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও লীগের সন্ত্রাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে নূন্যতম (ন্যূনতম) শাস্তিমূলক কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা এখনও অনেকের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ করছে। অভ্যুত্থানের পরও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিচার না হওয়া ন্যাক্কারজনক (ন্যক্কারজনক) এই কাজের জন্য দায়ী।’ তিনি আরও লেখেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোটা ক্যাম্পাসকে সিসি টিভির আওতায় আনতে হবে এবং প্রশাসনকে তদন্ত সাপেক্ষে এর সাথে জড়িতদের শাস্তি এবং পূর্বে অভিযুক্ত সকলের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান লেখেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের গেইটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ব্যানার সাঁটিয়েছে। রাতের আধারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একাজ করেছে। ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকা সাবেক ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও স্বৈরাচারের দোসর যারা প্রশাসনে বসে আছে তারা এসব কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নূন্যতম (ন্যূনতম) শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।’ তিনি আরও লেখেন, ‘ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর হয়েছে এসব গোষ্ঠী। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখনি যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে, ক্যাস্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় আনতে হবে। না হলে যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ লেখেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যেসকল শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রকাশ্যে খুনি হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা এখনো বহাল তবিয়তে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। বিভিন্ন কমিটির সদস্য হচ্ছে। আর গোপনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যার নমুনা ক্যাম্পাসে এসে ব্যানার টানিয়ে যাওয়া।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ব্যানারটি প্রচারিত হয়েছে, সেটি আদৌ আজকের নাকি আগের, সেটি বোঝার উপায় নেই। তবুও আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা ব্যানারটি পাইনি।’ সিসিটিভির ব্যবস্থা ছিল কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হল গেটের সামনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এরপরেও আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। কে বা কারা এটি লাগিয়েছে, খোঁজখবর পেলে ব্যবস্থা নেব।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow