ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম : ওবায়দুল কাদের

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন আতঙ্কে পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল’র এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই প্রথম গণমাধ্যমে কথা বলেন দলটির তিনবারের সাধারণ সম্পাদক।
সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কাদের বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান। সেদিন হয়তো আমার বেঁচে থাকারই কথা ছিল না। আমার নিজের বাসা ছেড়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। হঠাৎ করে তা সংসদ এলাকা ঘিরে ফেলে। শুরু হয় লুটপাট।
তিনি বলেন, যে বাসায় ছিলাম, সেখানেও হামলা হয়। তারা জানত না আমি সেখানে আছি। আমি স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকাই। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে অবস্থান করি। একসময় তারা বাথরুমে ঢুকতে চায়। আমার স্ত্রী বারবার বলেন আমি অসুস্থ। পরে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিই।
‘তখন কয়েকজন ছেলে ঢোকে, মুখে মাস্ক, হাতে লাল পতাকার ব্যাজ। প্রথমে তারা উত্তেজিত ছিল, কিন্তু আমাকে দেখে আচমকা আচরণ বদলে যায়। তারা সেলফি তোলে, ছবি তোলে। কেউ কেউ বলেছিল সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। আবার কেউ জনতার হাতে।’
ওবায়দুল কাদের জানান, পরে তারা তাকে একজন সাধারণ রোগীর মতো পরিচয় দিয়ে একটি ইজি বাইকে করে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়। ওরা বলছিল চাচা-চাচি অসুস্থ, হাসপাতালে নিচ্ছি। ভাগ্য ভালো ছিল বলেই বেঁচে গেছি।
ছাত্রলীগকে উত্থান দমন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি কখনও বলিনি ছাত্রলীগ এই অভ্যুত্থান দমন করুক। ইউটিউবে কেউ একজন বলেছে, সেটা সত্য নয়।
তিনি বলেন, আমি তখন পার্টির সেক্রেটারি ছিলাম। দায়িত্ব পালন করেছি। পার্টি অফিস, মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন পুড়ছিল। আমি কি নিজেকে নিরাপদ রাখব না? আমার নেত্রীকে নিরাপদ রাখতে হবে না? কেউ থাকলেও সেটাই করত।
তৎকালীন পরিস্থিতিতে জনরোষের কারণ কী ছিল—জানতে চাইলে কাদের বলেন, এটা আকস্মিক ঘটনা। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু, এক দফায় শেষ। ষড়যন্ত্রও ছিল। ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থ হয়েছে।
একটি বড় রাজনৈতিক দলে দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক থাকা সত্ত্বেও জনগণের ক্ষোভ আগে বোঝা যায়নি কেন? জবাবে তিনি বলেন, মানুষ ভুল করে। আমিও ভুল করেছি হতে পারে। তবে আমি চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি। আমার মন্ত্রণালয় সবার সামনে। আমি কোনো পদ বিক্রি করিনি।
দলীয় শাসনামলে নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমালোচনা হবে। তবে আমাদের উন্নয়ন কারও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা এই দেশকে বদলে দিয়েছি। সময় হলে মূল্যায়নও হবে।
অনেকদিন নীরব ছিলেন কেন- এই প্রশ্নে কাদের বলেন, অনেকে বলে আমাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। এটা ঠিক নয়। আমি অসুস্থ ছিলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) নিজেই আমাকে খুঁজেছেন, আমার খোঁজ নিয়েছেন।
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, আছে। তিনবার সাধারণ সম্পাদক হওয়াটা অনেকের পছন্দ না হওয়াও স্বাভাবিক। ‘এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও তাই ঘটে,’ বলেন কাদের।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের সেই দিনটা আমার জীবনে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। তবে আমি ভাগ্যবান ছিলাম—বেঁচে ফিরতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
What's Your Reaction?






