নুরাল পাগলের ভক্ত রাসেল নিহতের ঘটনায় মামলা, আসামি ৪ হাজার, গ্রেপ্তার ২

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলের দরবারে হামলায় ভক্ত রাসেল মোল্লা (২৮) নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন তার বাবা। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সোমবার দিবাগত রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় নিহত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় এখন পর্যন্ত আব্দুল লতিফ ও অভি মন্ডল রঞ্জু নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাজবাড়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব জানান, রাতে নুরা পাগলের ভক্ত নিহত রাসেলের বাবা বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। নতুন মামলায় দুইজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পূর্বের পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর মামলায় তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের অনেকেই এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই মো. সেলিম মোল্লা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, নুরাল পাগলের কবর উঁচু থেকে নীচু করাসহ বিভিন্ন দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে তৌহিদী জনতা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য শেষে কিছু বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করে। সেই সাথে ৫ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের ২জনকে পিটিয়ে ও ঢিল ছুঁড়ে আহত করে। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা করে নুরাল পাগলের বাড়ী ও দরবারের গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভবন ও দরবার শরীফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে তৌহিদী জনতা নুরুল হক অরফে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে রাতেই ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নুরাল পাগলের ভক্ত রাসেল মোল্লা নিহত হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গোয়ালন্দ পাক দরবারের বিতর্কিত পীর নুরাল হক নুরা পাগল। তার মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফের ভেতরে কাবা শরীফের আদলে রং করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নীচু, রং পরিবর্তন ও ইমাম মেহেদি দরবার শরীফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি করে শুক্রবার জুম্মা বাদ বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় জেলা ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি।
What's Your Reaction?






