ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর বালুখেকো সাত্তার এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক কাউন্সিলর, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা এখন বিএনপির ছায়ায় আশ্রিত যমুনার বালু সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র শাসক। দিনে রাজনীতি আর রাতে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে চলছে শত শত কোটি টাকার লেনদেন। অভিযোগ রয়েছে প্রতিবাদ করলেই অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকি, বাড়িতে করেন হামলা এমনি এক ভয়ংকর বালুখেকো আব্দুস সাত্তার (বালু সাত্তার)।
সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের ধানবান্ধি মহল্লার এস কনস্ট্রাকশনের মালিক আব্দুস সাত্তার। রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে দীর্ঘ বছর নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছর দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বুনেছেন তিনি। দুদকের তদন্তে মিলেছে কোটি কোটি টাকার অপ্রদর্শিত সম্পদ, যার সবটাই বালুর সাম্রাজ্য থেকে। রাজনৈতিক পরিচয়, প্রশাসনের নিরবতা আর স্থানীয় সিন্ডিকেট মিলে গড়ে তুলেছেন বালুর সাম্রাজ্য।
২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সব নেতাকর্মীরা পলাতক থাকলেও রহস্যজনক কারণে চলমান রয়েছে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামির তালিকায় নাম নেই সাত্তারের। শুধু তাই নয় বালু সাম্রাজ্যের পরিধি বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বনবাড়িয়ায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের গার্ডেন প্যালেস রিসোর্ট (কাদাই পার্ক) কিনেছেন তিনি।
জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক এমপিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন সাত্তার বাগিয়ে নেন ১০ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি পদ। হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া একের পর এক বালু সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান। যমুনার বালু সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র শাসক তিনি। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবাদ করলেই অপহরণ, হামলা, প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। যার উদহারণ ২০১২ সালে শ্রমিক নেতা নাসির ও তার শ্যালক টিক্কা হত্যা। হত্যা মামলার প্রধান আসামী হয়েও জেল খাটতে হয়নি তাঁকে। দুই কোটি টাকার বিনিময়ে মামলার বাদীকে ম্যানেজ করেন সাত্তার।
কথিত রয়েছে, একসময় সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলতো সাত্তারের টাকায়। আর বর্তমানে চলছে বিএনপি নেতারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা সেতুর ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেতু কর্তপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে রমরমা ব্যবসা করছেন। সদর উপজেলার রানীগ্রামসহ বেশ কয়েকটি বালুমহল জেলা বিএনপির কতিপয় কিছু নেতাকে অংশীদারি করার বিনিময়ে চলমান রয়েছে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয় গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামির তালিকায় নাম নেই তার। ফলে, সদর উপজেলার বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে রাতারাতি নিজেকে বিএনপির লোক বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার। এমনকি নিজের বালু মহালের বিশাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে কমিশন দিয়ে বিএনপিতে এসেছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘‘আব্দুস সাত্তার আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা ছিলেন। সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলা কবির বিন আনোয়ার সাত্তারের ব্যবসায়ী পার্টনার ছিল। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর সাত্তার দলবল নিয়ে হামলা চালায় পরে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের পিছন দিয়ে দোয়াতবাড়ি হয়ে ফকিরতলা দিয়ে পালিয়ে যায় এটা সবাই জানে। কিন্তু বর্তমানে দেখছি সে এখন বড় বিএনপি, তার সবকিছু চলছে আগের মতো।’’
এ বিষয়ে কথা বলতে সিরাজগঞ্জ শহরের পাউবোর বাঁধে পৌরসভার শেখ রাসেল পার্কের ইজারাদার আব্দুস সাত্তারের অফিসে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
What's Your Reaction?






