বিএনপিপন্থী পরিচয়ের আড়ালে জামায়াতের সুবিধাভোগী ইবির চার শিক্ষক!

Dec 12, 2025 - 16:20
 0  4
বিএনপিপন্থী পরিচয়ের আড়ালে জামায়াতের সুবিধাভোগী ইবির চার শিক্ষক!
ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিএনপিপন্থী পরিচয় ব্যবহার করে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. নজিবুল হক, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন ও সহকারী প্রক্টর লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলামের দিকে।

অভিযোগ রয়েছে—এরা বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদ ও ইউট্যাবের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বাস্তবে জামায়াতপন্থী গ্রীণ ফোরামের সুবিধা ভোগ করছেন এবং প্রশাসনে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রক্টর, প্রভোস্ট, সহকারী প্রক্টর ও পরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ইইই বিভাগের শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ, এসব নিয়োগের মাধ্যমে প্রক্টর শাহীনুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রশাসনের পেছনে একটি ‘নিজস্ব গ্রুপ’ গড়ে ওঠে, যারা ভিসির সব সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়ে দীর্ঘদিন বঞ্চিত শিক্ষকদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রক্টর শাহীনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর ড. ফকরুল ও সাবেক শিবির নেতা ড. আব্দুল বারীর সঙ্গে উপ-উপাচার্য এম এয়াকুব আলীর তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত এ উপ-উপাচার্য ওয়ালিউর রহমান পিকুলকে রেজিস্ট্রার করতে চাইলেও প্রক্টরের ‘হস্তক্ষেপে’ তা ব্যর্থ হয়। পরদিনই গ্রীণ ফোরামের পরামর্শে ইইই বিভাগের আরেক শিক্ষক ড. মনজুরুল হককে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার করা হয়।

জিয়া পরিষদ নেতাদের অভিযোগ, সহকারী প্রক্টর ড. ফকরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি শিবির ঘেঁষা ছাত্রদের বিশেষ সুবিধা দিতে শুরু করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি প্রভোস্ট হওয়ার পর মুক্তচিন্তা দমনে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেন। নববর্ষে ছাত্রীদের খাবার বন্ধ করে দিলে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন হয়।

আরও অভিযোগ আছে—দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না; বরং জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গেই সুবিধা ভোগ করেছেন। সিন্ডিকেট পদ লাভে প্রশাসন তোষামোদ অধ্যাপক নজিবুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি জিয়া পরিষদের কর্মসূচিতে অনীহা দেখালেও পর্দার আড়ালে নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করেন এবং প্রক্টরের পরামর্শে প্রশাসন ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে সিন্ডিকেট সদস্য পদ ‘বাগিয়ে নেন’। সাজিদ হত্যা মামলায় আচরণ নিয়ে প্রশ্ন আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে তার পরিবারের সদস্য শিবিরের দিকে অভিযোগ তুললেও—প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টররা আন্দোলন পণ্ডের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারীদের ডেকে জেরার নামে চাপ ও হুমকির অভিযোগও রয়েছে।

সাজিদের হত্যার বিচার দাবি করে বক্তব্য দেওয়ায় দুই ছাত্রনেতাকে শোকজ করা হয়, যেখানে ড. ফকরুল ও ড. আব্দুল বারীর যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির জন্য ‘বিপর্যয়ের আশঙ্কা’জিয়া পরিষদ ও ইউট্যাবের শিক্ষকরা মনে করছেন—বিএনপি পরিচয়ের আড়ালে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী এসব শিক্ষক ভবিষ্যতে বিএনপির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তারা দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow