বিচারকের সামনেই এজলাসে সাংবাদিককে মারধর

রাজধানীর শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক। বিচারক এজলাসে থাকাকালে বেসরকারি টেলিভিশন ‘সময় টিভি’র আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম নামে ওই সাংবাদিককে কয়েকজন আইনজীবী মিলে কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন। এতে গুরুতর আহত হন সিয়াম। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াসের আদালতে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি প্রোগ্রাম থেকে লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আজ লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক পান্নার জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। লতিফ সিদ্দিকীতে আদালতে হাজির করা না হলে সাংবাদিক পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়।
এই সংবাদ সংগ্রহ করতে আদালতে যান কয়েকজন সাংবাদিক। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক পান্নাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের ৮ম তলায় ৩০ নং এজলাসে তোলা হয়। মোক্তাদির রশীদ নামে এক সাংবাদিক পান্নার কাছে জানতে চান, কারাগারে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা। এসময় এজলাসের বেঞ্চে বসে থাকা অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন মাহি আসামির সাথে কথা বলার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা তর্ক-বিতর্ক হয় তাদের মধ্যে। এসময় ওই সাংবাদিককে আদালত থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন। ওই সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান, তিনি কোর্ট ইন্সপেক্টর কি না? তিনি বলেন, বিচারক বললে আমি বেরিয়ে যাবো। এরই মাঝে বিচারক এজলাসে ওঠেন। শাহবাগ থানার একটা মামলার শুনানি শুরু হয়।
এসময় একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা সিয়াম এসে ওই আইনজীবীকে বলেন, উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক। একথা বলার সাথে সাথে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠেই কানের ওপর ঘুষি মারেন। এসময় সিয়াম তার হাতে থাকা সময় টিভির মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তবে আইনজীবী তাকে টানা হেঁচড়া করা শুরু করেন। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই আইনজীবীদের কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। যে যেভাবে পেরেছেন তাকে মেরেছেন। চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি, লাথি কিছুই বাদ পড়েনি। এতে রক্তাক্ত আহত হন সাংবাদিক সিয়াম। আদালত কক্ষে এ পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাসকামরায় চলে যান বিচারক।
এসময় প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান। এ বিষয়ে সিয়াম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করলো কয়েকজন আইনজীবী। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এরপর বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে আবার এজলাসে আসেন বিচারক। শুনানি নিয়ে আদালত লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়।
What's Your Reaction?






