রাজনৈতিক দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার : ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলের অতি ক্ষমতায়নের চাপের কারণে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। যার ফলে সকালে একটি সিদ্ধান্ত জানালেও বিকেলে আরেকটি সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। এই সরকারের যে ম্যান্ডেট ছিল, সেটিকে তারা জোরালোভাবে ধারন করতে পারছে না। সরকারের পেছনে যে রেজিম কাজ করছে- তা এতটাই ক্ষমতাশালী যে, সরকার বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করছে।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘সমাবেশ ও সম্মেলন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এ আয়োজন করে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমলাতন্ত্র সংস্কারের নামে যা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। শিক্ষা খাত থেকেই যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের সূচনা, সেই খাতের সংস্কারে এখনও কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। রাজনীতির সংস্কার নিয়ে কথা বলতে গেলে সেটাকে বিরাজনৈতিকীকরণ বলা হচ্ছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীরা মিলে দেশে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এত কম সময়ে কোনো দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচারের উদাহরণ বিশ্বে নেই। এর পেছনে ব্যবসায়ীদেরও বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু ব্যবসা খাতের সংস্কার নিয়েও কোনো আলোচনা নেই।
গোয়েন্দা সংস্থার সংস্কার নিয়েও কোনো উদ্যোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে শুধু কয়েকজন মানুষের পদের পরিবর্তন হয়েছে, আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। একইভাবে দেশে কর্তৃত্ববাদের বিকাশের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনিয়ন্ত্রিত চর্চা।
আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বিচার বিভাগকে এখনও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত আপত্তিকর। এই পচনের গভীরে প্রবেশ করা জরুরি। বিচার ব্যবস্থা ঠিক না হওয়ার জন্য নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিচার বিভাগের সংস্কার করা গেলে অন্য সব অধিকার আদায়ের পথ সহজ হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। এ সময় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি: গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা’ ও ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর: সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ ব্যানারে একটি মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। মিছিলটি টিএসসি হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।
What's Your Reaction?






