লালনের গানের মানবতার বাণী আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, লালনের গান শুধুই সুর নয়— তা অত্যন্ত উচ্চমাত্রার সংগীত, যার মধ্যে রয়েছে গভীর দার্শনিক, রাজনৈতিক এবং সর্বোপরি মানবিক মূল্য। তার গানে যে মানবতার কথা বলা হয়েছে, তা আজকের পৃথিবীতেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আর ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এবারই প্রথম ফকির লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করে, লালনের দর্শন এবং অবদান শুধু জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার নয়। ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, লালনের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ থাকবে না। কারণ, লালন কোনো দলীয় আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি মানবতার প্রতীক।
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের দরবারে অনেক সাধকের নাম পৌঁছে গেছে। কিন্তু লালন এখনও আন্তর্জাতিকভাবে ততটা পরিচিত নন। অথচ তার ভাবধারা, গান এবং দর্শন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জানার অধিকার আছে। সেজন্য আমরা চাই- বিশ্বে লালনের নাম, গান ও ভাবনার বিস্তার হোক।
ফরিদা আখতার বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান শুধু স্মরণ নয়, লালনের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগামী দিনে লালনের গান ও দর্শন শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়বে।
ভিডিও বার্তায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, লালন সাঁই আমাদের দেশের অন্যতম বড় দার্শনিক ও ভাবুক। তার জীবনদর্শন ও আদর্শ আমাদের আত্মস্থ করা প্রয়োজন। এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। তিনি আরও বলেন, এ উপলক্ষে আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় লালন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
তিন দিনব্যাপী চলা এই অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি আয়োজক, অংশগ্রহণকারী শিল্পী এবং সাধু-ভক্তদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মফিদুর রহমান। আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখক ও গবেষক লালন বক্তব্যের মুখ্য আলোচক প্রফেসর গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, বিশিষ্ট কবি, লেখক ও চিন্তক এবং লালন বিশেষজ্ঞ ফরহাদ মজহার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন। এসময় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।
অনুষ্ঠানমালায় দেশব্যাপী লালন অনুসারী, সাধক, গবেষক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। লালন সাঁইয়ের জীবন দর্শন, মানবতা ও সাম্যের বাণীকে জাতীয়ভাবে স্মরণ ও উদযাপনের উদ্দেশ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও এ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে।
What's Your Reaction?






