সরিষা ফুলে ভরে উঠেছে ক্ষেত দ্বিগুণ লাভের আশায় গাইবান্ধার চাষীরা
মো. শুভ ইসলাম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা জেলার মাঠে মাঠে এখন অপরূপ সৌন্দর্য বিলাচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদ সমারোহ। হেমন্তের শিশির ঝরা ফুলের পাঁপড়িতে শীতের সকালে রোদের ঝিলিক আর বাতাসে সরিষা ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে চারদিকে।
জেলার ইউনিয়নগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার মাঠ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। দুর থেকে দেখলে মনে হবে যেন হলুদ চাদর বা গালিচা। সকাল ও বিকালে সরিষা মাঠ দেখতে ও ছবি তুলতে ছুটছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
চাষের সময় আর খরচ দুটোই কম হওয়ায় কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় সরিষা চাষ। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দিন দিন বাড়ছে সরিষার চাষ। বাজারে দাম ভালো থাকায় সরিষায় আশার আলো দেখছেন কৃষকরা।
অন্যদিকে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরিষাকে বিকল্প হিসেবে দেখছে সরকার। এজন্য ফসলটির উৎপাদন বাড়াতে নেয়া হয়েছে বড় প্রকল্প। ফসলের শ্রেণিবিন্যাসে পরিবর্তন এনে গতিশীল করা হচ্ছে সরিষার চাষ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সরিষার উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কয়েক বছরে বেশকিছু নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিনার সরিষা হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১ দশমিক ৮ টন। জীবনকাল মাত্র ৮৭ দিন। বাড়তি ফলন ও কম সময়ের কারণে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর ফলন বেশি। এ কারণে এতে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে ২বার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
সারাদেশে সরিষা চাষ বাড়ার আরেকটি কারণ সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ । জমির পাশেই সহায়তা হচ্ছে। এতে মধু চাষের পাশাপাশি সরিষার উৎপাদনও বাড়ছে। সরিষা ও মৌচাষি উভয়েই লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) সাত লাখ ৯৯ হাজার ৮৪১ টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছর অর্জিত উৎপাদনের চেয়ে ৪৯ হাজার টন বেশি। গত বছর দেশে সাত লাখ ৫০ হাজার ৭৭০ টন সরিষা উৎপাদন হয়েছিল।
চলতি বছর গাইবান্ধা জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ওই এলাকার চাষি মো: দুদু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বিঘাপ্রতি ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন তারা। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ছয় হাজার হেক্টর। সেখানে চাষহয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে।
একই অবস্থা গাইবান্ধা ১১ নং গিদারী ইউনিয়নেও। ওই অঞ্চলের গোড়াইন, পচারকুড়া, তালতলা, রুপার বাজার, কাউন্সিলর বাজার, কামার জানি, আগের বছরের চেয়ে এ বছর এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা উৎপাদন হচ্ছে। এ বছর এই জেলায় ৫২ হাজার ৯০৫ টন সরিষা হবে বলে আশা করছে কৃষি অধিদপ্তর।
What's Your Reaction?