সুনামগঞ্জে ভূয়া জুলাইযোদ্ধা ফয়ছলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

Oct 30, 2025 - 22:42
 0  6
সুনামগঞ্জে ভূয়া জুলাইযোদ্ধা ফয়ছলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের
ছবি : সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জে এ ক্যাটাগরীর ভূয়া জুলাইযোদ্ধা ফয়ছল আহমদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয় জুলাইযোদ্ধাদের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোক গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুস ছালামের পুত্র ফয়ছল আহমদ শ্বশুড়বাড়ীর ঠিকানা ব্যবহার করে এ ক্যাটাগরী গেজেট নং ৪৭৯ মেডিকেল কেস আইডি নং ২৬৪০১ হিসেবে জুলাইযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তার স্থায়ী ঠিকানা জগন্নাথপুর থানার কলকলিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খাসিলা গ্রামে।

তালিকাভূক্তির আগে উক্ত ফয়ছল আহমদ জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের খাগাউড়া গ্রামে মামার বাড়ীতে অবস্থান গ্রহন করতো।

ঠাকুরভোক গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ফয়ছল একজন পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর পিতা ও শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী আবুল কালাম গ্রুপের কট্টর সমর্থক। তার নানা সোনাহর আলী আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আন্দোলন চলাকালে ফয়ছল আহমদ জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের খাগাউড়া গ্রামে মামার বাড়ীতে বসবাস করতো। তার মামা আয়াস মিয়া একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। অপর মামা নবিকুর রহমান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি। খাসিলা গ্রামের তার দাদার বাড়ীর আত্মীয় স্বজনরা সবাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

ফয়ছল আহমদ নিজেও গত সংসদ নির্বাচনে এম এ মান্নানের পক্ষে শ্বশুড়বাড়ী, দাদার বাড়ী ও নানার বাড়ীতে গণ সংযোগ করেছে। মন্ত্রী এম এ মান্নানের ডিও লেটার নিয়ে এলাকার একজন সরকারী কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বদলী ও পদোন্নতি পেয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সরকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে জাল ও ভূয়া কাগজপত্র সংগ্রহক্রমে আওয়ামী লীগ কর্মী ফয়ছল আহমদ জুলাইযোদ্ধা সাজে এবং সকলের চোখ ফাকি দিয়ে জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের মাধ্যমে ইতিমধ্যে পাসপোর্ট হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ধরা পরার আশঙ্কায় লন্ডনে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সুনামগঞ্জের স্থানীয় জুলাই যোদ্ধারা বলেন, রাজধানীর উত্তরায় আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন একটি থাই গ্ল্যাস/সিরামিকসের দোকানে কাজ করতো আওয়ামীলীগ কর্মী ফয়ছল আহমদ। আন্দোলন চলার সময় ওই দোকানের সামনে আন্দোলনকারীরা আসলে পুলিশের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের কর্মী ফয়ছল ছাত্র আন্দোলনকারী নেতাকর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। হামলার এক পর্যায়ে ফয়ছল আহত হয়। চতুর ফয়ছল ঢাকার একটি হাসপাতালে পরিচয় গোপন করে চিকিৎসা নিয়েছে। পরবর্তীতে পালিয়ে সুনামগঞ্জ চলে আসে। এখানে এসে খোলস পাল্টিয়ে হয়ে যায় স্বঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ও ওয়ারিয়র্স ওফ জুলাইয়ের আহবায়ক সেজে বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং হাসপাতালে চাঁদা এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছে।

অভিযোগ আছে ছাত্র আন্দোলনের দুই একজন নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আহত জুলাই যুদ্ধের অনুদান ১৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন জায়গায় জুলাই যোদ্ধার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা পয়সা লুটে নেওয়ার।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে অভিযুক্ত ফয়ছল আহমদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ঢাকার উত্তরার আহত হয়েছি। স্থানীয়রা জানেনা বিধায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাচ্ছে। অঙ্গহানী না হওয়ার পরও কিভাবে এ ক্যাটাগরীর জুলাইযোদ্ধা হলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। গত ৬ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, ২৩ অক্টোবর সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এবং ১৯ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে ভূয়া জুলাই যোদ্ধা মোহাম্মদ ফয়ছল আহমদ কে “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পূণর্বাসন সংক্রান্ত জেলা কমিটি, সুনামগঞ্জ” এর সদস্য পদ হতে বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow