১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে প্রবাসীর বাড়িতে যুবদল নেতাদের হামলা, দুই বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ

Sep 11, 2025 - 22:26
 0  2
১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে প্রবাসীর বাড়িতে যুবদল নেতাদের হামলা, দুই বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ
ছবি : সংগৃহীত

‎পাবনা  প্রতিনিধি

১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর বাড়িতে অতর্কিত হামলা ও গুলির অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুই বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত হয়েছেন।

‎বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দাশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার( ১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

‎গুলিবিদ্ধরা হলেন- ইউনিয়নের চোকদার পাড়া গ্রামের রজব আলী শেখের ছেলে ও চরতারাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ শফি (৪৫), দাস পাড়া গ্রামের মনতাজ আলী খানের ছেলে বিএনপি নেতা টিক্কা খান (৪৭)। আহত ব্যক্তি হলেন- দাশপাড়া গ্রামের মৃত খবির উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে কাশেম বিশ্বাস (৫০)। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী বলে জানা গেছে।

‎অভিযুক্তরা হলেন- চরতারাপুর ইউনিয়নের দাশপাড়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হকেন প্রামানিকের ছেলে ও চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক  আব্দুস সালাম প্রামানিক, সাহের মোল্লার ছেলে তনসের মোল্লা, মজিবর বিশ্বাসের ছেলে শামীম বিশ্বাস।

‎অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দাশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে  কাশেম বিশ্বাস,  শেখ শফি, টিক্কা খান সহ কয়েকজন বসে মিটিং করতেছিলেন। এমন সময় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিকের নেতৃত্ব কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা বাড়ির গরুর ঘরের পিছন থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এরপর স্কুলের সামনে এসে আবারো গুলি করেন। এসময় বিএনপি নেতা শেখ শফি গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রায় আধাঘন্টা পর ঘটনাস্থলের পাশ থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তায় ধরে গুলি করা হয়। এসময় তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ শফির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

‎‎ভুক্তভোগী আবুল কাশেম বিশ্বাস বলেন, ১৭ বছর ধরে আমি মালয়েশিয়াতে থাকি। আমরাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুবদলের সালাম প্রামানিক প্রায়ই চাঁদার দাবিতে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিতো। আমি চলতি মাসের ৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি। আসার পর যুবদলের এসব নেতারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বলি যে আমিও তো বিএনপি করি তাহলে বিএনপি করে বিএনপিকে চাঁদা দিতে হবে কেন। এসব আবদার পুরণ না করায় আমার বাড়িতে এসে অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমার সঙ্গে বসে থাকা দুজনকে গুলি করে। এময় আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে চলে যায়।

‎তিনি আরও বলেন, এসব চক্রটি সালিশী বাণিজ্য, অবৈধ বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি  সহ এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেন তিনি।

‎আবুল কাশেমের মেয়ে কনা খাতুন বলেন, আমাদের বাড়িতে এসে প্রায়ই যুবদলের এসব নেতারা চাঁদা দাবি করত। তারা এসে বলত যে আমরা দল করি খরচ লাগে আমাদের টাকা দিতে বলেন। আমরা বলি যে আমার বাবা বাড়িতে আসার পর নিয়েন। গত কয়কদিন আগে বাবা বাড়িতে আসছে। আসার পরে এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ির বাহিরে যেতে পারে না। গতকাল রাতে বাবার বন্ধুরা এসে কথা বলতে আসছিল। এমন সময় তারা গুলি করে। এর আগেও এসে আমাদের নানা হুমকি দিয়ে আসত। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

‎অভিযুক্ত যুবদল নেতা আব্দুস সালাম প্রামানিক বলেন, আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এখানের কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই।

‎পাবনা জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্য সচিব মনির হোসেন বলেন, ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। প্রকৃত তদন্ত হবে। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোপুৃর্বেও আমরা যত অভিযোগ পেয়েছি, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

‎পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুস সালাম বলেন, প্রবাসে থাকা অবস্থায় আবুল কাশেম যুবদল নেতা সালামদের বালুর ব্যবসা নিয়ে লেখালেখি করত। বিদেশ থেকে বাড়ি আসার পর আবুল কাশেমের সঙ্গে শেখ শফি ও টিক্কাকে মিশতে নিষেধ করেন। এর জের ধরে ইউনিয়ন যুবদল নেতার নেতৃত্ব গুলির ঘটনা ঘটে। দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।  আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শর্টগানের গুলির দুটি খোসা পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow