গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সীমানা প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করল প্রধান শিক্ষক!

Jul 29, 2025 - 19:41
 0  10
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সীমানা প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করল প্রধান শিক্ষক!
ছবি : সংগৃহীত

পাবনা প্রতিনিধি

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে ফেলা সরকারি টাকায় নির্মাণ করা সীমানা প্রাচীর পুনর্নির্মাণসহ কথিত মার্কেটের সামনের শার্টার মুখ ইটের দেওয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

গত ২৩ ও ২৪ জুলাই পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এই অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় নানা মহল ও সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচিত ৫ আগস্টের পর দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আছিম উদ্দিনকে এডহক কমিটির সভাপতি করে ৪ সদস্যের এডহক কমিটি অনুমোদন নিয়ে আসেন। সভাপতিকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক স‹ুলের সামনে টেবুনিয়া-বাঘাবাড়ি মিনি বিশ্বরোডের ধারে স্কুলের সামনের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে সেখানে ৩ রুম বিশিষ্ট একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। অন্যদিকে স্কুলের শহীদ মিনারের পাদদেশ ভেঙ্গে আরেকটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন।  

বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ব্যাপক নাড়া দেয়। দেখা দেয় আলোচনা সমালোচনা। স্থানীয় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে এই মার্কেট নির্মাণ বন্ধ, স্কুলের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ অনিয়মতান্ত্রিক এই কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবী জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর দেখা দেয় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড়। নানা চাপে পড়ে প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন সরকারি ছুটির দিনের (শুক্রবার ও শনিবার) সরকারি টাকায় নির্মিত ভেঙ্গে ফেলা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও দোকানঘর গুলোর সামনের শার্টার মুখে ইটের দেওয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছেন।

সংবাদ প্রকাশের আগে স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আছিম উদ্দিন বলেন, স্কুলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রধান শিক্ষক আমার সাথ আলোচনা করেই মার্কেট নির্মাণ করছেন। মার্কেট নিমার্ণ দোষের কিছু নয় বলেই দাবী করেন সভাপতি আছিম উদ্দিন। সংবাদ প্রকাশের পর এবং প্রাচীর নির্মাণ ও মার্কেটের দোকানঘরগুলোর মুখ ইটের দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আগের বক্তব্যে বলেছিলেন, মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে না। ঘরগুলো সততা স্টোর, ক্যান্টিন, স্টোর ও গার্ড রুম তৈরী করা হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশের পর প্রাচীর নির্মাণ ও মার্কেটের দোকানঘরগুলোর মুখ ইটের দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপনাকে কোন কৈফিয়ত দিবো না। আমার কোন অনিয়ম, দূর্নীতি বা অন্যায় থাকলে আমার শিক্ষা অফিস তথা প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে বলে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

স্থানীয়রা বলেন, প্রধান শিক্ষকের এতো টাকা প্রয়োজন যে, শহীদ মিনারের পাদদেশ ভেঙ্গে সেখানেও দোকান ঘর বানিয়েছেন। অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে তৈরী করেছেন তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর। এক সময়ে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র তথা উপজেলা আওয়ামীলীগকে ব্যবহার করতেন। এখন পল্টি দিয়ে বর্তমানদের আঁকড়ে ধরে অন্যায় অনিয়ম বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন।  

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম রাঙা অভিযোগ করে বলেন, পাবনা তথ্যা দেশে স্বনামে খ্যাত কবি বন্দে আলী মিয়াকে স্মরণ করেই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ভাবতে পারিনি এমন অনিয়ম ও অন্যায়ের খনিতে রূপ পাবে। অন্যায়, দূর্নীতি করতেই সুকৌশলে ও পরিকল্পিত ভাবেই আমাকে স্কুল থেকে সড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে আমার কষ্ট নেই। কিন্তু স্কুলটি রক্ষায় আমি দুদক, শিক্ষা দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজ হয়ে নয়ছয় তদন্ত করে সেটা বালিশচাপা দিয়েছেন।

আমিরুল ইসলাম রাঙা বলেন, প্রধান শিক্ষক পজিশন বিক্রির লক্ষ্যেই স্কুলের সততা স্টোর, ক্যান্টিন, গার্ডরুম ও স্টোর রুম নাম ব্যবহার করে মূলত মার্কেট নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু গণমাধ্যম ও স্থানীয়দের তৎপরতায় অবশেষে ভেঙ্গে ফেলা প্রাচীর নির্মাণ ও মার্কেটের সন্মুখ দরজাগুলো ইটের দেওয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন ভাবে দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এপাশে বন্ধ করলেও ওপাশে জায়গা অভাবে আর ব্যবহার করা হবে না। প্রধান শিক্ষকের এই অবৈধ কর্মকান্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা গচ্চা গেল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবী করছেন, প্রধান শিক্ষক ৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার আপন ভায়রাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। স্কুলের কাজের পাশাপাশি তার নিজের বাড়ির কাজকর্মও করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow