৬ বছরেও শেষ হয়নি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

Oct 29, 2025 - 14:23
 0  3
৬ বছরেও শেষ হয়নি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ, এলাকাবাসীর ক্ষোভ
ছবি : সংগৃহীত

বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার বামনা উপজেলায় গত ৬ বছর আগে শুরু হওয়া মডেল মসজিদটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মডেল মসজিদটি নির্মাণে একের পর সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সর্বশেষ, গত বছরের জানুয়ারিতে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। এরপরে আবার কাজটি থেমে যায়। এরইমধ্যে একাধিকবার ঠিকাদার পরিবর্তন হয়। যার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বরগুনা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বামনা উপজেলায়ও মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মডেল মসজিদ থেকে ইসলামিক বই বিক্রি, ইমাম প্রশিক্ষণ, ইসলামি গবেষণা, হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, হজ্ব যাত্রীদের নিবন্ধন প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

গত ২০১৯ সালে বামনা উপজেলায় ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে  ৯০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করার জন্য তৃতীয় তলার একটি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরুতে কাজটি পান মঠবাড়িয়ার সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস। সে সময় বামনা কোর্ট বিল্ডিং ভেঙে সেখানে মসজিদ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন পর কোর্ট বিল্ডিংয়ে পাশে উপজেলা পরিষদের দুটি পরিত্যক্ত ডরমিটরি ও কর্মকর্তাদের দুটি বাস ভবন ভেঙে সেখানে ৪০ শতক জমিতে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদের পাইলিং নির্মাণ শেষ না করেই কাজ বন্ধ করে চলে যায়। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর ১ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে মোট ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়।

গত বছরের জানুয়ারি মাসে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার ওরফে রাঙ্গা রিপনের এমকেটি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবার মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করে। সে সময় মসজিদটির পিলারসহ দোতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে জেলে যান বামনার মডেল মসজিদ নির্মাণের ঠিকাদার রিপন জমাদ্দার ওরফে রাঙ্গা রিপন। এরপর থেকেই ঝিমিয়ে পড়ে নির্মাণকাজ।

বামনা মডেল মসজিদ নির্মাণের বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুজন মিয়া জানান, আমাদের এ প্রতিষ্ঠানে দুজন মালিক রয়েছেন। একজন রাজনৈতিক মামলায় জেলে এবং অন্যজন কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তাই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মসজিদটির নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। সমস্যা নেই দ্রুতই কাজ সম্পন্ন করা হবে।

বামনা আসমাতুন নেছা পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি রুহুল আমিন শরিফ জানান, এটা বামনা মানুষের একটা কাঙ্খিত মসজিদ। ইতোমধ্যে অনেক জেলা, উপজেলায় এই মডেল মসজিদ চালু হয়েছে। সেখানে মুসল্লিরা ইবাদত করার সুযোগ পেয়েছেন। অথচ বামনার এই মসজিদের কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি। এটি  সম্পূর্ণ হলে এখানে মুসল্লিরা আরামে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এটি বামনাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। আমরা এই মসজিদের জন্য মানববন্ধনও করেছি কিন্তু প্রশাসনসহ কেউ কোনো কর্নপাত করেনি।

তিনি আরও জানান, বামনা একটি ঘনবসতি এলাকা। এখানে অন্যান্য মসজিদ ছোট হওয়ায় গাদাগাদি করে মুসলমানদের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই মুসল্লিরা যাতে মন খুলে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য এই মডেল মসজিদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাদের মাধ্যমে এই মডেল মসজিদটি দ্রুত নির্মাণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ রানা জানান, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। একই সময় বেতাগী, কাঁঠালিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ওয়ার্কওয়ার্ডার দেওয়া হয়েছে এবং একই সময়ে কাজও শুরু হয়েছে। অথচ বামনা ছাড়া সকল মসজিদের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং সেখানে মুসল্লিগণ আনন্দ ও খুশি মনে নামাজ আদায় করছেন কিন্তু বামনা মডেল মসজিদের কাজ এখনো পড়ে আছে। এই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। তখনকার আওয়ামী লীগের নেতারা এই কাজটি পেয়েছিলেন এবং তারা ইচ্ছে মতো কাজটি করতেন। দীর্ঘদিন তারা কাজটি ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়েছেন। তাছাড়া একাধিকবার এই কাজের  হাত বদল হইছে এবং এখানে যারা থাকেন ও সাইডে কাজ করেন তাদেরকে নাকি বেতনও  ঠিক মতো দেওয়া হয় না। তাই তারা মসজিদের রড ও সিমেন্ট বিক্রি করে বাজার সদয় করে তারা সেখানে বসে রান্না করে খায়। কিছু দিন আগে স্থানীয় মুসল্লীরা মানববন্ধন করেছেন এবং জেলা প্রশাসক ববাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

বরগুনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গণপূর্ত এক্সিয়েনের কাছে তারা একাধিকবার চিঠিও দিয়েছিলেন কিন্তু এক্সিয়েন কোনো কর্নপাত করেননি। আমার মনে হয় ঠিকাদারদের সঙ্গে এক্সিয়েন লিয়েজো করছেন এবং ভাগ খাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে বামনার মুসল্লিগণ বরগুনা গণপূর্ত অফিস ঘেরাও করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি তাদেরকে থামিয়ে রেখেছি। আমি চাচ্ছি আপনাদের মাধ্যমে এবং মুসল্লিদের সুবিদার্থে বামনার এই মডেল মসজিদটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন হোক এবং মুসল্লিরা আরামে নামাজ আদায় করুক।

এ বিষয়ে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্লা রবিউল ইসলাম জানান, ওখানে ঠিকাদার এবং জায়গা পরিবর্তনের কারণে গত দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল। তাই দেরি হয়েছে। তাছাড়া আমি এখানে নুতন এসেছি। এ কাজ আমি আসার আগের। বর্তমানে কাজ চলোমান রয়েছে। দ্রুতই বামনা মডেল মসজিদের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow