ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা

পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে চলমান সংগ্রামের কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রয়োজনীয় পরিষেবা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।
বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ১৩ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী। গত ১৮ মাসেও প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ।
২০১৭ সালে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক মারাত্মক অভিযান থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। জাতিসংঘ এই অভিযানকে 'জাতিগত নির্মূলের একটি উদাহরণ' হিসেবে উল্লেখ করেছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) জারি করা এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (উএনএইচসিআর) বলেছে, 'বিশ্বব্যাপী তীব্র তহবিল সংকটের কারণে, নতুন আগত এবং ইতোমধ্যে উপস্থিত উভয় শরণার্থীদেরই গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ হবে না এবং সমগ্র রোহিঙ্গা শরণার্থী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।'
রোহিঙ্গাদের জন্য উএনএইচসিআর-এর ২৫৫ মিলিয়ন ডলারের আবেদনের মাত্র ৩৫ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ না করলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা সেপ্টেম্বরের মধ্যে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং প্রয়োজনীয় রান্নার জ্বালানি বা এলপিজি ফুরিয়ে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো প্রধান দাতাদের কাছ থেকে সাহায্য তীব্রভাবে কমে গেছে, যা মানবিক খাতে বড় প্রভাব ফেলেছে।
রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ইতোমধ্যেই প্রভাবিত হয়েছে, কারণ জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ গত মাসে কক্সবাজারে হাজার হাজার শিক্ষাকেন্দ্র স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার শিশুর শিক্ষা সংকট আরও খারাপ হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান আরব নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংকট এখন খুবই ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। এরপর স্বাস্থ্য খাত, তহবিল সংকটের কারণে এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাদের পরিষেবা স্থগিত করেছে, যা হাজার হাজার গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা, নবজাতক শিশু এবং শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাদের বেশিরভাগই এখন আগে আসা আত্মীয়দের সঙ্গে বসবাস করছে।
মিজানুর রহমান আরব নিউজকে আরও বলেন, পানি ও স্যানিটেশন সমস্যাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে - এমন সাইট ব্যবস্থাপনাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আশ্রয় ব্যবস্থাপনা একটি খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। চলমান সংকট রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ হতাশার মাঝে পড়তে বাধ্য করতে পারে।
What's Your Reaction?






