দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজে কোটি টাকার হিসাব জালিয়াতি, অধ্যক্ষ ও হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য

পাবনা প্রতিনিধি
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির অডিট প্রতিবেদনে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজে আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান ও হিসার রক্ষক আলমগীর হোসেনের যোগসাজসে ১৩ লাখ ৪ হাজার ২৩০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে উদঘাটন হয়েছে।
অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কলেজের বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম ঘটে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৩১৬ টাকার ভাউচার ব্যয়ে অনিয়ম এবং ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা একই ভাউচার দুইবার ব্যবহার করে উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় কলেজের গভর্নিং বডি অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক মো. আলমগীর হোসেনকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে এবং তাকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কলেজের সব আর্থিক লেনদেন অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমানের একক স্বাক্ষরে সম্পন্ন হতো, যা সরকারি বিধি-বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
অডিট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্ব খাতে প্রায় ৩০ হাজার ১২০ টাকা ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেন একাই প্রায় ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে তৎকালীন সভাপতি ও অধ্যক্ষের যোগসাজশে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি আয় ব্যাংকে জমা না দিয়ে, হিসাবরক্ষক আলমগীর নিয়মিতভাবে নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের কাছে রেখেছেন, যা কলেজ পরিচালনা বিধির সরাসরি লঙ্ঘন বলে দাবী করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হিসাব রক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমাকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমি শোকজ নোটিশের জবাবে বলেছি, আমি কোন অর্থ আত্মসাৎ করিনি। এক সাথে ১৩ বছরের অডিট করার কারণে হিসাব এলামেলো হচ্ছে। আশা করছি স্বচ্ছতার সাথে হিসাব মিলিয়ে দিতে পারবো। এ জন্য আমার কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান প্রতিষ্ঠাকালীন লম্বা সময়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বার্থে পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে একক স্বাক্ষরে লেনদেন করেছেন। তিনি বলেন, সে সময়ে সরকারি বিধি কি ছিল আমার জানা নেই। তথন আমি একেবারেই নতুন ছিলাম। আর কলেজের আর্থিক খাতে কোন ধরণের অনিয়ম বা দূর্নীতি করা হয়নি। ১৩ বছরের অডিট এক সাথে হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও অনিয়ম থাকায় হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেনকে শোকজ করা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলেজ গভর্নিং বডি সভাপতি ও আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “অডিটে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিচার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
What's Your Reaction?






