নবাব পরিচয়ে প্রতারণা: রাজধানীতে সক্রিয় সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার নবাব পরিচয়ের আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের তৎপরতা প্রকাশ্যে এসেছে। চক্রটির মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে নবাব দাবি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে ৬-৭টি মামলা চলমান থাকলেও, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে তিনি মিরপুর, রূপনগর, পল্লবী, বাউনিয়া, সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াকফ এস্টেটের জমি ৯৯ বছরের জন্য নামমাত্র মূল্যে লিজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি ভুয়া নবাব টাইটেল ব্যবহার করে এবং নবাব পরিবারের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সম্পত্তিতে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন। এছাড়া, “নবাবী টেলিভিশন চ্যানেল” নামে একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে নিজেকে বৈধ নবাব প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবরে অভিযোগ জমা পড়েছে যার সূত্রে পাওয়া যায় খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহ নিজেকে নবাব পরিবারের মোতাওয়াল্লী দাবি করেন এবং ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলা (সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং- ২৮৪১/২০২১) শুনানির আগেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে কোর্ট বায়েস্টের বিনিময়ে কন্ট্রাক্ট নিয়ে নিয়েছেন বলে প্রচার করছেন।
এছাড়া, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্নীয় বলে পরিচয় দেন এবং দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার ফুপু। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রচারণা চালান। এমনকি, সজীব ওয়াজেদ জয়, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেন এবং তাদের আস্থার সুযোগ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। অভিযোগের বিষয় খাজা ইকবাল আহসানুল্লাহ র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন ও ঠিকানায় গিয়েও পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহর মতো আরেকজন প্রতারক খাজা আলী হাসান আসকারী (আসল নাম আব্দুল কাইউম, পিতা আব্দুস সালাম, সাং ইসলামবাগ) একই কৌশলে ওয়াকফ এস্টেটের জমি আত্মসাৎ করার চেষ্টায় লিপ্ত। জানা গেছে, তিনি আগেও প্রতারণার দায়ে জেল খেটেছেন এবং তার অপরাধমূলক কার্যক্রম বিভিন্ন পত্রিকায় ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগের বিষয় খাজা হাসান আজ কাদের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে উনি বলেন যা পারেন করেন আগে অনেক নিউজ হয়েছে আপনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কিনা এ বিষয়ে বললে উনি বলেন হ্যাঁ হয়েছিলাম তো কি হইছে।
ভুয়া নবাব পরিচয়ধারী এই প্রতারক চক্র ওয়াকফা এস্টেট এর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে আইনউদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ এস্টেটের জমি নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হবে বলে প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এই অভিযোগের বিষয় আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেছা ওয়াকফা এস্টেট এর অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী আবুল কালাম আনসারী (জামাল) এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এই প্রতারণার বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। তিনি আরো জানান, এই চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে স্টেট এর পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে মামলা চলমান আছে এ থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের প্রতারণার জাল বিস্তার করে রেখেছে আমি অনুরোধ করছি গণমাধ্যমকে সচেষ্ট ভূমিকা রাখার জন্য।
What's Your Reaction?