কুড়িগ্রামে অবহেলার আরেক নাম সদর হাসপাতালের ‘ডায়রিয়া ওয়ার্ড’
আনোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল "ডায়রিয়া ওয়ার্ড" যেখানে ডায়রিয়া নির্মূলের বদল ডায়রিয়া উৎপন্ন হয় এবং ডায়রিয়া দ্রুত ছড়ায় বলে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় অবলীলাক্রমে বলে দেয়। ২৪ সালের ৪ ও ৫ই আগষ্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সব জায়গা নড়েচড়ে বসলেও কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের "ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি" এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে। রোগীদের দেখভাল চলছে ঢিমেতালে। দ্রুত উপশমায়ের কোন লক্ষণ দেখছে না ভর্তিকৃত ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীরা।
সদর হাসপাতালের যতগুলো রোগী রয়েছে সব গুলোরই আশার স্থল ডায়রিয়া ওয়ার্ড। কেন্দ্রটি কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের পূর্বদিকে পুরাতন বিল্ডিং এর পূর্ব পাশে অবস্থিত। এই ওয়ার্ডে শিশু, পুরুষ এবং নারী উভয় মিলে কয়েকটি আসন মাত্র। আসন সংখ্যা রোগীর তুলনায় এক তৃতীয়াংশ। দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় লোকজন, সুশীল সমাজ, সচেতন মহল, নাগরিক সমাজসহ বিজ্ঞজনেরা আসন সংখ্যাসহ ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিকে কলেবর বৃদ্ধিসহ নানা দিক থেকে এগিয়ে নেওয়ার একান্ত চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করছেন।
দুঃখের বিষয় ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি সরেজমিনে তদন্ত করতে গেলে রোগীদের সমস্যা, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নালার সমস্যা, মশা-মাছির সমস্যা অধিকন্ত বলে রোগীর আত্মীয় স্বজন মনে করেন। যেকোনো রোগী ভর্তি হলেই অটোমেটিক্যালি ভিতরে দু-এক ঘণ্টা থাকলেই আরো ডায়রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেখানে ডায়রিয়া নির্মূলের কথা সেখানে ডায়রিয়া উৎপন্ন হয় এবং দ্রুত এক রোগীর থেকে অন্য রোগীতে ডায়রিয়া বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসা নিতে আসা নিলয় নামের এক রোগী পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হলেও প্রায় দু দিন গত হয়ে গেলেও এ পর্যন্ত একজন ডাক্তারও তার সংস্পর্শে আসেনি বলে অভিযোগ রোগীর মায়ের। শিশু রোগী ভর্তি, রোগীর যত্ন-সেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আরো ভয়াবহ বলে একাধিক রোগী ও রোগীর লোক সূত্রে জানা গেছে।
হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের নালা থেকে অব্যাহত ভাবে মশা-মাছি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গ জন্ম নিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কথা বলার চেষ্টা করা হলে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪-৫ জন নার্সের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় কোন ডাক্তারের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত নার্সরা জানান, আমাদের যে কোন সমস্যার কথা বলে লাভ নেই, দো-তালায় তত্ত্বাবধায়ক এবং আমাদের স্যার আরএমও রয়েছেন আপনারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিভিন্ন বেডের রোগী কর্তৃক জানা যায় নার্স দিয়েই ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীদের সমস্যা সমাধান করা হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় দু-তিনদিনও ডাক্তারের সাক্ষাৎ পান না ভর্তিকৃত রোগীরা।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চতুর্দিকে সব সময় ময়লা আবর্জনা ও অপরিষ্কারে ভরপুর থাকে ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত রোগীর বেড এবং টয়লেট গুলো সব সময় ময়লা এবং দুর্গন্ধযুক্ত। অনেক রোগী ও ভর্তিকৃত রোগীর আত্মীয়-স্বজন রোগীর আশপাশে অবস্থান করলেও সব সময় তাদের নাকে মুখে কাপড় লাগিয়ে থাকতে দেখা যায়।
রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা বলেন, এখানে ভর্তিকৃত রোগীদের সঙ্গে থাকলে নিশ্চিত আমাদেরও ডায়রিয়া হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। থাকেনা সব সময় ডায়রিয়া রোগীর স্যালাইন। প্রায় উপস্থিত সেবিকারা বলেন বাইরে থেকে স্যালাইন নিয়ে আসতে।
যে সমস্ত রোগীরা ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রয়েছেন তাদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন সকলেই জানান, আমাদের কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে দ্রুত লোকবল নিয়োগ ও রোগীদের সেবা বিশেষ করে অবহেলিত "ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি" কে দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
What's Your Reaction?