পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৬ বছর পর মায়ের বুকে ইউসুফ

Jan 30, 2025 - 08:01
 0  6
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৬ বছর পর মায়ের বুকে ইউসুফ
ছবি : সংগৃহীত

সাবেক বিডিআর সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাবাসের পর ফিরে পেলেন এক নতুন জীবন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ইউসুফের মা। তবে ছেলে ফিরলেও কারাগারে তার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলা ১৬টি বছর কি আর ফিরবে? এ ক্ষতি কি কখনো পূরণ হবে?–এমন প্রশ্ন পরিবারের।

মোহাম্মদ ইউসুফ উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের টেকনিক্যাল কলেজ গেইট সংলগ্ন মোহাম্মদ ইলিয়াছের ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি প্রথম। ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ ২০৫ জন বিডিআর সদস্যকে খালাস দিয়েছেন তারমধ্যে মোহাম্মদ ইউসুফ একজন। তিনি গত ২৩ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে ২৬ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে ফেরেন। তখনকার অবিবাহিত এই যুবকের বয়স এখন ৪০ বছর। কারামুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলে এলাকাবাসীও ইউসুফকে সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে স্বাগতম জানান।

মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমি ২৪ বছর বয়সে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে বিডিআর’এ যোগ দিই। তখন আমি ডিগ্রি’র ছাত্র। পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯ তারিখের ঘটনায় এপ্রিল গণগ্রেপ্তারে আমিও গ্রেপ্তার হই। ওই সময় আমি কেন্দ্রীয় বিডিআর হাসপাতালে কর্মরত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। যদিও এসবের কিছুই আমি জানতাম না। ওই মামলায় প্রথম দুই বছর (২০০৯-১০) কাশিমপুর কারাগারে পরে বাকি সময়টা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আমাকে রাখা হয়। ২০১৩ সালে হত্যা মামলা থেকে খালাস পেলেও বিস্ফোরক মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই কাটাতে হয়।’

আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, জেল থেকে মুক্ত হয়েছি এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্থরের জনগণের প্রতি। সবার কাছে একটাই প্রত্যাশা আর কোনো নিরাপরাধ বিডিআর যেন এই শাস্তি না পান। যারা নিরাপরাধ তারা যেন আমার মতো মায়ের কোলে ফিরে আসেন। তবে অপরাধীদেরও শাস্তি কামনা করছি।

সাবেক এই বিডিআর সদস্য বলেন, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে, পরিবারের হাল ধরার জন্য ও আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ২০০৮ সালে যোগ দিই বিডিআর এ সৈনিক হিসেবে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। উলটো চাকরিতে যোগদান করতে না করতেই ২০০৯ সালের পিলখানার ঘটনায় আসামি হয়ে চাকরিচ্যুত হতে হয়। পাঠানো হয় জেলে। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো ১৬ বছর পরেও আমি ফিরে এসে বাবা-মাকে জীবিত পেয়েছি।

মোহাম্মদ ইউসুফকে ফিরে পেয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি তার মা রানু বেগম। তিনি বলেন, মা হিসেবে সন্তানকে ফিরে পেয়েছি এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। বড় সন্তান ইউসুফ বিডিআরের চাকরি পাওয়াতে অভাবের সংসারে আশার বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু এই ঘটনায় অভাবও মিটল না সন্তানের সুখও পেলাম না। আর কোনো মায়ের যেন এই করুণ দশা না হয়। আমার ছেলের মতো যেন আর কোনো নিরাপরাধ সন্তানকে জেল হাজতে থাকতে না হয়।

এদিকে ইউসুফকে শুভেচ্ছা জানাতে তার বাড়িতে যান পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের সংগঠন ‘এক্স বিডিআর কক্সবাজার ২০০৯’। অন্তবর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করার দাবি জানান তারা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow