পঞ্চগড় সীমান্তে রাতের আঁধারে বাংলাদেশিদের ধানক্ষেত নষ্ট করার অভিযোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের গাড়িয়ানপাড়া সীমান্ত এলাকার দরিদ্র নারী আকতারা বেগম। ধার-দেনা করে একেবারে সীমান্তঘেঁষে ১০ কাঠা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন তিনি। সবে ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। এক থেকে দুই মাস পরই কাটা যেত ধান। কিন্তু গত ৬ অক্টোবর রাতে তার ধানক্ষেতে ওষুধ ছিটিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়।
ধানক্ষেত নষ্ট করে দেওয়ার ঘটনায় দিশাহারা আকতারা বেগম বলেন, ‘খুব কষ্ট করে ধার-দেনা করে ১০ কাঠা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। আমার স্বামী নেই। কত যত্ন করেছি, সার-কীটনাশক দিয়েছি।
এখন ধানের শীষ বের হচ্ছে। এই সময়ে ভারতের লোকজন রাতের অন্ধকারে আমার ধানক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আমার খাবার ধান আমি কোথায় পাব? আমরা তো কোনো দোষ করিনি? কেন আমার কষ্টের ধানক্ষেত নষ্ট করে দিল তারা? আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই।’
শুধু আকতারা নয় ওই সীমান্তে বাংলাদেশিদের ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমির ধান ওষুধ ছিটিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের অভিযোগ, গাড়িয়ানপাড়ার বিপরীতে ভারতের গ্রামের কিছু বাসিন্দা রাতের অন্ধকারে তাদের জমিতে ঘাসমারা জাতীয় ওষুধ ছিটিয়ে ক্ষেতের ধানের চারাগাছ জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তবে স্থানীয়দের দু-একজন টর্চলাইট মারলে তারা পালিয়ে যায়। টের না পেলে আরো বেশি জমি নষ্ট করার পরিকল্পনা ছিল বলেও দাবি করেন তারা। এ ঘটনায় পতাকা বৈঠক হলে বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিএসএফ। এদিকে কষ্টের ফসল নষ্ট হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী চাষিরা। তারা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগী রেখা বেগম বলেন, ‘এক লাখ টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমি বন্ধক নিয়ে ধান আবাদ করেছিলাম। সেই ধান ওষুধ ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে ওরা। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। আমার তিনটি সন্তান। এই আবাদ তো তুলতে পারলাম না। ছেলে-মেয়েদের এখন কী খাওয়াব?’
সাইদুর ইসলাম বলেন, ‘রাতের আঁধারে বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতের মানুষজন এসে আমাদের ক্ষেতে কিছু একটা ছিটিয়ে যায়। আমাদের লোকজন টর্চলাইট মারলেই তারা পালিয়ে যায়। ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমির ধান জ্বলে গেছে। এত দূর থেকে রাতে আমরা ছবি তুলব কিভাবে।’
রুবেল ইসলাম বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা জমি জ্বালিয়ে দিয়েছে ওরা। যে রাস্তা ধরে তারা পালিয়ে গেছে, ওই রাস্তার কিছু অংশের ঘাসও মরে গেছে। ফসলের সঙ্গে শত্রুতা—এটা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না।’
গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দিপু বলেন, ‘সীমান্তের ভারতীয় চা-বাগান থেকে বাংলাদেশিরা চা-পাতা কেটে নিয়ে আসে—এমন অভিযোগ তুলে রাতের আঁধারে ভারতের লোকজন বাংলাদেশিদের ধানক্ষেতে ঘাসমারা জাতীয় ওষুধ ছিটিয়ে দেয়। এতে অনেকের ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি বিজিবির কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএসএফ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে সন্ধ্যার পর সীমানা পেরিয়ে কোনো ভারতীয় আসার সুযোগ নেই। তার পরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে চেয়েছেন তারা।
What's Your Reaction?






