মহাস্থানগড়ে ফের শুরু বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ খননকাজ

Feb 4, 2025 - 18:01
 0  2
মহাস্থানগড়ে ফের শুরু বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ খননকাজ
ছবি : সংগৃহীত

আড়াই হাজার বছর পূর্বে মাটিচাপা পড়া ইতিহাস তুলে আনতে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে আবারও চলছে বাংলাদেশ-ফ্রান্সের যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। খনন শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত আটটি কূপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়াও পাওয়া গেছে মূল্যবান পোড়ামাটির বল, কাচের পুতি, মৃত পাথরের টুকরাসহ প্রাচীন স্থাপনার নানা নিদর্শন।

বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি মহাস্থানগড়ের বৈরাগী ভিটার সাউথ ইস্ট এলাকায় খনন কাজ শুরু হয়। খনন কাজটি চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তিনটি বর্গে ভাগ করে খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ২৪ জন শ্রমিক। প্রতিটি বর্গে ৮ জন করে কাজ করছেন। 

এর আগে, গত ২০২০ সালে বৈরাগীর ভিটায় খননের পর প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন মেলে। এবারও একই স্থানে খনন কাজে আটটি কূপের সন্ধান মিলেছে। পাশাপাশি বেশকিছু পোড়া মাটির বল, কাচের মালার পুতি, মৃত পাথরের টুকরাসহ প্রাচীন স্থাপনার নানা নিদর্শন পাওয়া গেছে। যা অনেক মূল্যবান। 

খনন কাজে নিয়োজিতদের ধারণা- এসব খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে পরবর্তী ১৪০০-১৫০০ শতকের। এই সময় লৌহযুগেরও শুরু হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। খননে পাওয়া পুরোকৃর্তি নিদর্শন নিয়ে দুই দেশের বিষেজ্ঞরা গবেষণা করবেন। গবেষণা শেষে নিদর্শনগুলো মহাস্থানগড়ের জাদুঘরে সংরক্ষিত করা হবে।

খননকাজ চলাকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি ম্যাসদুপিন গত ৩১ জানুয়ারি খনন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করে তিনি প্রত্ননিদের্শন ও খননকাজে নিয়োজিতদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।

বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়। আড়াই হাজার বছর আগের ইতিহাস ও ঐহিত্য সমৃদ্ধ ছিল এ নগরী। গুপ্ত, পাল ও মৌর্য্য আমলের অসংখ্য রাজা এই এলাকা শাসন করেছেন। মহাস্থানগড়ের ভিতরের একটি অংশের নাম বৈরাগীর ভিটা। প্রাচীন দুর্গনগরী মহাস্থান গড়ের জাহাজঘাটা থেকে দক্ষিণে এবং পরশুরাম প্যালেসের উত্তরে বৈরাগী ভিটার অবস্থান। এ স্থানটি একটি রাজবাড়ি ছিল বলে ধারণা করা হয়। 

সেই সময়ের রাজা কর্তৃক মুনি, ঋষি বা বৈরাগীর সেবা করা হত বলে স্থানটি নাম বৈরাগীর ভিটা। মহাস্থানগড়ের দুর্গ নগরীর প্রাচীরের দক্ষিণে অবস্থিত বৈরাগীর ভিটায় ১৯২৮ সালের দিকে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে পাল আমলের প্রাথমিক ও শেষ যুগের দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ঠিক তার পাশেই লাগানো স্থানের নাম ধরা হয় লইয়েরকুড়ি বা মহাস্থানভিটা হিসেবে। 

প্রত্নতত্ত্ব কিছু পাওয়ার আশা থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের লইয়েরকুড়ি ও বৈরাগীর ভিটায় খনন কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর। খনন কাজটি শেষ হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। খনন কাজ করে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স যৌথভাবে। ওই সময় প্রায় দুই মাস খননের পর পাওয়া যায় গুপ্ত, পাল ও মৌর্য্য আমলের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অবকাঠামো ও বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিজস্ব অর্থায়নে খননকাজ পরিচালনা করার পর উন্মোচিত অবকাঠামো নিয়ে গবেষণা করা হয়। এরপর আবারও চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে খনন কাজ শুরু হয়েছে। চলবে ১৬ ফেব্রুয়ায়ি পর্যন্ত। 

জানা যায়, মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় খননে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রত্ন নিদর্শন। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খননকাজ পরিচালনা করে আসছে। করোনাকালীন সময়ে খননকাজ বন্ধ থাকলেও ২০২০ সালের পর থেকে এটিই বৈরাগীর ভিটায় প্রথম খনন কাজ। 

যৌথ খননে ফ্রান্স দলের সাত জনের মধ্যে বিশেষজ্ঞ প্রত্নবিদ নেতৃত্বে দিচ্ছেন আঞ্চলিক পরিচালক ড. কলিন নেফ্রাংক। এই খননকাজে বাংলাদেশ দলে ৫ সদসস্যের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজশাহী-রংপুর বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা। তার সঙ্গে আছেন মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা, রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি শাহজাদপুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান স্বপনসহ অন্যান্যরা। 

ফ্রান্স দলের বিশেষজ্ঞ প্রত্নবিদ ও আঞ্চলিক পরিচালক ড. কলিন নেফ্রাংক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত ১৮ জানুয়ারি বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের বৈরাগী ভিটার সাউথ ইস্ট এলাকায় খনন কাজ শুরু হয়। চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। খননের সময় অনেক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন পাওয়া গেছে। যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কাজ দেবে। 

রাজশাহী-রংপুর বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, মহাস্থানগড়ের বৈরাগী ভিটার উত্তর পূর্ব পাশে খনন কাজ চলছে। এবার খননের সময় পোড়া মাটির বল, কাচের মালার পুতি, মৃত পাথরের টুকরাসহ প্রাচীন স্থাপনার নানা নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

তিনি আরও জানান, এছাড়া আটটি কূপ এরমত পাওয়া গেছে। আরও কিছু খনন করা গেলে এবং গবেষণা শেষে ধারণা করা যাবে কত শতকের এই অঞ্চলটি গড়ে উঠেছিলো। মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব বিশ্ব স্বীকৃত। সে স্বীকৃতির নিদর্শনই প্রতি বছরের খননকাজে বিভিন্ন ইতিহাস উন্মোচিত হচ্ছে। 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow