কুষ্টিয়ায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট

Nov 9, 2025 - 00:40
 0  19
কুষ্টিয়ায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট
ছবি : সংগৃহীত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

আধিপত্য বিস্তারের পুরনো দ্বন্দ্বে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিএনপির অন্তত ১২ নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাড়িতে হামলা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর ও বের কালোয়া গ্রামে এ হামলা হয়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সপ্তাহখানেক আগেও দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুই বিএনপি কর্মী আহত হন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কালোয়া বাজার ও পদ্মা নদীতে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয় নিয়ে কয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি বকুল বিশ্বাসের লোকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলামের পক্ষের। সম্প্রতি বিএনপি নেতা বকুলের সঙ্গে ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জমারত সরদারের (এগলা গ্রুপ) লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। ১ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে রাশিদুলের লোকজন কালোয়া বাজারে গেলে প্রতিপক্ষ তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তখন রাশিদুলের কর্মী জিয়ার শেখ ও বিপুল শেখ আহত হন। এর পর দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বকুল বিশ্বাসের পক্ষের খাইরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২১ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দেন। পুলিশ ২ নভেম্বর সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। ওই মামলায় আহত জিয়ারকে আসামি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার তাঁর ছেলে বিপুল শেখ ২৫ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দেন। রাশিদুলের পক্ষের যুবদল নেতা সালমান এফ রহমানের ভাষ্য, ওই এজাহার পুলিশ এখনও নথিভুক্ত করেনি। এসব ঘটনার জেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় বকুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে রাশিদুলের পক্ষের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হামলায় কয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবদল নেতা সালমান এফ রহমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলামসহ অন্তত ১২টি বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই পক্ষের অভিযোগ, তাদের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু ও আসবাবসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তারা অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন কয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাজির ভাই সোহেল রানা, স্বেচ্ছাসবক লীগের সহসভাপতি ওলি জোয়াদ্দার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জমারত সরদার, দপ্তর সম্পাদক মিন্টু খন্দকার ও আওয়ামী লীগ সমর্থক ইয়ারুল।

বক্তব্য জানতে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জমারত, ইয়ারুল, সোহেলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাদের অনেকের বাড়িতে ঝুলছে তালা। সবার ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। 

সুলতানপুর গ্রামে অবস্থিত যুবদল নেতা সালমানের পাকা বাড়ির সবকটি কাঁচের জানালা ভাঙা দেখা গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাব ও অন্য মালপত্র অগোছালো। গোয়ালঘরে নেই কোনো গবাদিপশু। সাবমারসিবল পাম্পটিও নেই। স্বজনরা ভিড় করেছে এই বাড়িতে। 

সালমানের মা শেফালী খাতুন বলেন, ভয়ে ছেলে মাসখানেক ধরে বাড়িছাড়া। শুক্রবার বাদ মাগরিব ইয়ারুল, সোহেল, মাসুম, নাজমুল, ফিরোজসহ অনেক সশস্ত্র লোকজন বাড়িতে হামলা করে। তারা ঘরের জানালা, আসবাব ভাঙচুর করে নগদ টাকা, স্বর্ণ ও দুটি গরু লুটে নিয়ে গেছে।

সালমানের বাবা মতিউর রহমান কয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি করি। এতদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করেছে। এখনও চাঁদা না পেয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে বলেও জানান।

বের কালোয়া গ্রামে বাড়ি বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলামের। তাঁর বাড়িসহ বেশকিছু বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরের ক্ষত। আতঙ্কিত নারী-শিশুরা কথা বলতে চাননি। রাশিদুলের ভাই সজীবের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে আওয়ামী লীগের সোহেল, ইয়ারুল, চুন্নু, জমারতসহ শত শত মানুষ গ্রামে হামলা করে। আমার বাড়িসহ অনেকের বাড়িতেই লুটপাট করেছে। এতে আমার এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।’

হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস। তাঁর ভাষ্য, ‘রাশিদুল ও সালমান পদ্মায় চাঁদাবাজি করার জন্য এলাকায় অশান্তি করছে। প্রায়ই আমার লোকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার হামলা চালালে আমার লোকজন পাল্টা ধাওয়া করে। তবে কারও বাড়িতে ভাঙচুর বা লুটপাট করা হয়নি।’

তাঁর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি নেতা বকুল মেম্বার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের ১২টি বাড়িতে হামলা লুটপাট করিয়েছেন। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ তাঁর ভাষ্য, চাঁদা না দেওয়ায় এক মাসে এ নিয়ে তিন দফায় হামলা হয়েছে। থানায় চার-পাঁচটি মামলাও হয়েছে। জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এক পক্ষের লোকজন আরেক পক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১ নভেম্বরের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। তাদের প্রতিপক্ষ এজাহার দিতে দেরি করায় সেই মামলা নথিভুক্ত হয়নি। তদন্ত চলছে। দ্রুতই নথিভুক্ত করা হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow