ঢাকা নবাব ওয়াকফ এস্টেট নিয়ে মিথ্যা বংশ তালিকা দাখিলের অভিযোগ

Feb 20, 2025 - 11:35
 0  16
ঢাকা নবাব ওয়াকফ এস্টেট নিয়ে মিথ্যা বংশ তালিকা দাখিলের অভিযোগ
ছবি : সংগৃহীত

নবাব এস্টেটের সম্পত্তি ও মোতাওয়াল্লী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধে। পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং-২৮৪৯/২০২১ মামলায় তিনি একটি ভুয়া বংশ তালিকা দাখিল করেন। তিনি দাবি করেন যে তিনি নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুরের পুত্র নবাব হাবিবউল্লাহ বাহাদুরের পুত্র খাজা আব্দুল গনির সন্তান।

তবে আদালতের নথি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর রিপোর্ট থেকে প্রমাণিত হয় যে, খাজা ইকবালের পিতা ছিলেন খাজা আব্দুল গনি (অ্যাডভোকেট), যিনি খাজা হাফিজের পুত্র। খাজা আব্দুল গনি নবাব এস্টেটের একজন বেতনভুক্ত আইনজীবী ছিলেন এবং পরবর্তীতে নবাব ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী কমিটির সদস্য হন। ঐ কমিটির প্রধান ছিলেন নবাব হাবিবউল্লাহ বাহাদুরের পুত্র নবাবজাদা খাজা আব্দুল গনি।

১৯৮৫ সালে ঢাকা ওয়াকফ প্রশাসকের আদেশ অনুযায়ী নবাবদের ওয়াকফ এস্টেটের (ইসি নম্বর-৪১১এ, ৪১১বি, ৪১১ডি এবং ইসি নম্বর-২৮০৮) এই চারটি ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী হিসেবে নবাবজাদা খাজা আব্দুল গনির নাম তালিকাভুক্ত হয়।

নবাবজাদা খাজা আব্দুল গনি ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব কর্তৃক ১৭ আগস্ট ২০০৪ তারিখে প্রদত্ত ওয়ারিশান সনদ অনুযায়ী, নবাবজাদা খাজা আব্দুল গনির কোনো পুত্র ছিল না।

তার স্ত্রী মিসেস সারোয়ার জাহান এবং চার কন্যা খুরশীদ জাহান, নাজমা জাহান, ইশা জাহান ও সামিয়া জাহান রয়েছেন। বর্তমানে নবাব ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী কমিটি খাজা জাকি আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহর পিতা খাজা আব্দুল গনি (অ্যাডভোকেট) ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি তার চেম্বারে কাজ শুরু করেন এবং অত্র স্টেটের নথিপত্র দেখে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা শুরু করেন। 

এছাড়া আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ এস্টেটের (ইসি নম্বর-৪১১ সি) নাম ওয়াকফ প্রশাসকের ১৯৮৫ সালের আদেশে অন্তর্ভুক্ত না থাকা সত্ত্বেও ভুয়া নবাব দাবিদাররা এটিকেও তাদের এস্টেট হিসেবে দাবি করে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে আইনুদ্দিন হায়দারের বংশধর আবুল কালাম আনসারী জামাল ওয়াকফ প্রশাসনের অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নবাব পরিবার বা খাজা ইকবাল আহসান উল্লাহর সঙ্গে এই এস্টেটের কোনো আইনগত বা বংশগত সম্পর্ক নেই।

গুজব রয়েছে, খাজা ইকবাল হাইকোর্ট থেকে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোতাওয়াল্লী পদ দখল করেন এবং সুপ্রিম কোর্টে পদ ধরে রাখতে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন আদেশ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের বিশ্লেষক ড. তানভীর আহমেদ বলেন, "এ ধরনের জালিয়াতি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং এটি সম্পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ। এর ফলে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায় এবং অপরাধের প্রবণতা বাড়ে।"

বিশিষ্ট সাংবাদিক রেহান আহমেদ বলেন, "মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করা শুধু সম্পত্তি দখলের প্রচেষ্টা নয়, বরং পুরো সমাজের আইনি কাঠামোর ওপর আঘাত। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।"

কলামিস্ট সাবিনা সুলতানা বলেন, "ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন সম্পদ রক্ষায় সত্য ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।"

আইন ও অধিকার ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোতালেব হোসেন বলেন, ’কোনো বহিরাগত ব্যক্তি বা নবাব পরিবারের নামধারী কেউ যদি ভবিষ্যতে অত্র স্টেট নিয়ে মোতাওয়াল্লী সংক্রান্ত মামলা করে, তবে আদালত ওয়াকিবের ওয়াকফ দলিলটি পড়ে ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের জটিলতা আর সৃষ্টি হবে না।"

তিনি আরও বলেন, "ওয়াকফ দলিলে ওয়াকিবের ভাতিজা ব্যতীত কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে ভাতিজার ভবিষ্যৎ বংশধর ব্যতীত অন্য কাউকে যেন প্রধান্য না দেওয়া হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি।"

অত্র স্টেটের সুষ্ঠু পরিচালনা ও সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে সরকার যদি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মোতাওয়াল্লীর অধীনে সংযুক্ত রাখেন, তবে সম্পত্তিগুলো রক্ষা পাবে এবং স্টেট পরিচালনায় শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। এছাড়া, ওয়াকফ দলিল মোতাবেক ওয়াকফ সম্পত্তি ও ওয়াকফ এস্টেটের নামে আলাদা খতিয়ান খোলা হলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার সমস্যা আর থাকবে না।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের জালিয়াতি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয় বহন করে। এটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রাখে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow