যে কারণে স্থগিত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার
২০২৪ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শনিবার রাতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকি।
‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিতের সিদ্ধান্ত’ শীর্ষক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৪’-এর এক সভা আজ ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যা ৬.০০টায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
‘এমতাবস্থায় ‘‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’’-এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হলো। অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি পুনঃপ্রকাশ করা হবে।’ উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
অন্যদিকে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকি ফেসবুকে লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা প্রয়োজন, যে আজব নীতিমালা এই ধরনের উদ্ভট এবং কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয় সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে- এই সব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?’
এরআগে, গত ২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ২০২৪ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি–লেখকদের নামের তালিকা প্রকাশ করে জাতির মননের প্রতীক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটি। এতে ১০ জন কবি ও লেখকের নাম ছিল। বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একাডেমির নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রস্তাবক কমিটির প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৪-এর সিদ্ধান্তক্রমে বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ অনুমোদন করে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রাপ্ত কবি–লেখকদের মধ্য ছিলেন- কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল।
পুরস্কার ঘোষণার পর থেকেই কবি–লেখকদের একাংশ প্রতিবাদমুখর হয়। এরইমধ্যে ‘বিতর্কিত বাংলা একাডেমি পুরস্কার–২০২৪ বাতিল ও ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের প্রতিবাদে’ একাডেমি ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছে বিক্ষুব্ধ কবি–লেখক সমাজ নামের একটি সংগঠন। আগামীকাল রোববার বেলা ১২টায় বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকে এই কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এতে জাতীয় কবিতা পরিষদ, জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব, জাতীয় বিপ্লবী সাংস্কৃতিক জোট, কবিতা বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কিছু সংগঠন ও জ্যেষ্ঠ কবি–লেখকেরা অংশ নেবেন বলে আয়োজক সূত্র জানা গেছে। কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, কবি জাকির আবু জাফর, কবি সাম্য শাহ, শিশুসাহিত্যিক মামুন সারওয়ার প্রমুখ ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুরস্কার স্থগিত করার পরও কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন বিক্ষুব্ধ কবি–লেখক সমাজের আহ্বায়ক আবিদ আজম। কবি আবিদ আজম ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘পুরস্কার কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের শাস্তি ও বাংলা একাডেমির সংস্কার দাবিতে কর্মসূচি পালন করব আমরা। বিশেষ করে স্বৈরাচারের শাসনামলে বাংলা একাডেমিতে নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী লীগের দোসরদের অপসারণের জোর দাবি জানানো হবে।’
What's Your Reaction?