আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফিরেছে ঝালকাঠির গামছার ঐতিহ্য

সাজ্জাত বিশ্বাস, ঝালকাঠি প্রতিনিধি
শত বছরের প্রচলিত হাতে ঘুরানো তাঁতের চাকার বদলে এবার দেশে এসেছে আধুনিক মেশিন কোরিয়ার থেকে দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত আর প্রস্থে আড়াই হাতের এক একটি গামছা দেশের খুচরা বাজারে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর জেলার এ প্রাচীন শিল্পটি ঘুরে দাঁড়ানোয় নতুন উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফিরেছে ঝালকাঠির গামছার ঐতিহ্য। এতে উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি মিটছে চাহিদাও।
ঝালকাঠির সারাদেশে যেসব পণ্যে সুনাম আছে তার মধ্যে গামছা অন্যতম। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও সমাদৃত এ ঐতিহ্যবাহী তাঁতের গামছা। ৪০ বছর আগে শুরু হওয়া এ শিল্প এখনো টিকে আছে আজও।
ঝালকাঠির গনি মিয়ার গামছা সারাদেশেই একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। তবে সেই গনি মিয়া এখন আর নেই। গনি মিয়ার মৃত্যুর পরে তার ছেলে নাসির উদ্দিন কয়েকবছর তাঁতে গামছা বুনে প্রতিষ্ঠানটি ধরে রাখছিলেন।
বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে নাসির উদ্দিন পৈত্রিক পেশার হাল ছেড়ে দেন। এক পর্যায়ে ওই প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন গনি মিয়ার ভাইয়ের ছেলে খোকন মিয়া। এতদিন গামছা হাতে বোনা হতো। যার কারণে চাহিদা বেশি থাকলেও উৎপাদন হতো কম। এছাড়া হাতে বোনা তাঁতের সংখ্যাও এখন অনেক কম। হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার ধরে রেখেছে পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য।পপরিস্থিতিতে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে গামছা শিল্প।
গামছা তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছে ঐতিহ্যবাহী গনি মিয়ার গামছা। প্রায় ৩/৪ বছর ধরে আধুনিক মেশিনে প্রস্তুত হচ্ছে গামছা।
পশ্চিম ঝালকাঠির কীর্ত্তীপাশা সড়কের রামনগরে গিয়ে দেখা যায়, কোরিয়া থেকে আমদানি করা স্বয়ংক্রিয় মেশিনে গামছা তৈরি করছেন কারিগররা। প্রতিদিন এখন কারখানায় ২৫০টি গামছা উৎপাদন হচ্ছে।
কারিগররা জানান, ঝালকাঠির গামছা যাচ্ছে চট্টগ্রাম, নরসিংদী, চাঁদপুর, বরগুনা ও পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ঝালকাঠির এ ঐতিহ্যবাহী গামছা দেশি-বিদেশি অতিথিদেরও দেওয়া হয় উপহার কিংবা উপঢৌকন হিসেবে। গামছা তৈরির কাঁচামাল আনা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। নিজস্ব ডিজাইনাররা কারাখানায় বসেই ডিজাইন করছে বাহারি রঙের গামছার।
স্থানীয় ফয়সাল সঙ্গে কথা হলে, শৈশবে দেখেছি বাসন্ডা গ্রামে ঘরে ঘরে তাঁতে শাড়ি লুঙ্গি আর গামছা বোনা হতো। শতাধিক কারিগর পরিবারের প্রধান আয় ছিল এ শিল্প। তাঁতের খট খট শব্দে দিন-রাত মুখরিত ছিল। তবে তা এখন অতীত স্মৃতি। মাত্র দু-তিনটি পরিবার কেবল গামছা তৈরি করে বাপদাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছে। দুই যুগে ধীরে ধীরে তাঁত বোনাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঝালকাঠির গামছা শিল্প।
উদ্যোক্তা খোকন হোসেন বলেন, কোরিয়া থেকে আমদানি করা স্বয়ংক্রিয় এ মেশিনে এখন প্রতিদিন কারখানায় ২৫০ গামছা উৎপাদন হচ্ছে খুব সহজেই। আর তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
পাকা রঙ এবং টেকসইসহ গুণগতমানে ঝালকাঠির গামছা দেশ সেরা দাবি করে উদ্যোক্তা খোকন আরও বলেন, দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত আর প্রস্থে আড়াই হাতের এখানকার এক একটি গামছা দেশের খুচরা বাজারে ৩৮৫ টাকায় বিক্রি হয়।
ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. আল-আমীন বলেন , জেলার এ ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছিল। নতুন করে আধুনিক মেশিনের যাত্রায় তা আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আসলে মেশিনে উৎপাদন লাভজনক হয় ও সময় বাঁচায়। স্থানীয় এই প্রাচীন শিল্পটির প্রসারে উদ্যোক্তা ও কারিগরদের প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
What's Your Reaction?






